ডেস্ক রিপোর্টঃ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। শনিবার দুপুরে (স্থানীয় সময়) নিউইয়র্কে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনের সাইডলাইনে দুই প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ নেতারা এ বৈঠকে বসবেন। জানা গেছে, বৈঠকে গুরুত্ব পাবে আল-কায়েদা ইস্যু ও শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এই দুই অপতৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করবে ভারত।দুদেশই শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠককে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ইতোমধ্যে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। ফলে দুই নেতার মধ্যে এটিই প্রথম বৈঠক। তাই এই বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে কি ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে সে ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ একই ধরনের উদ্বেগের শরিক। ফলে দুই দেশের দুই নেতার মধ্যে প্রথম বৈঠকে এ সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। হাসিনা-মোদি বৈঠকের পর দুদেশের সম্পর্ক আরো গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। দুদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের
মাত্র এক সপ্তাহ আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর দুদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ পরামর্শমূলক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক হয়েছে। স্বভাবতই আসন্ন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে জেসিসিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপও গুরুত্ব পাবে।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র দুদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো কী তা স্পষ্ট না করলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের জন্য পশ্চিমা ষড়যন্ত্রসহ নানা ধরনের হুমকির কথা জানাবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান এই ষড়যন্ত্রগুলোর জানানোর পাশাপাশি মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে শেখ হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দুই নেতাই ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।
জানা গেছে, হাসিনা-মোদি বৈঠকে আল-কায়েদা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। সাম্প্রতিক আল-কায়েদার হুমকি এবং জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে দুদেশ অনেক কাছাকাছি হয়েছে। কংগ্রেসের মিত্র শেখ হাসিনার সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী তৎপরতা ও জিরো টলারেন্স নীতি বিজেপি সরকারকে অপ্রত্যাশিতভাবে কাছে টেনে এনেছে। তাই ভবিষ্যতের যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করবেন দুই নেতা।
সূত্র জানায়, আল-কায়েদাসহ পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামী বেশ কয়েকটি দলের যোগাযোগ এবং বাংলাদেশকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে ও ভারতে তাদের সম্ভাব্য জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত সরকার। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির নামে সম্প্রতি প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এই উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই বার্তায় ভারতে আল-কায়েদার শাখা খোলা এবং আসাম, আহমেদাবাদ, গুজরাট, জম্মু ও কাশ্মীরে কার্যক্রম বিস্তৃত করার বার্তা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপরও আল-কায়েদার চোখ রয়েছে বলা হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠার অতীত রেকর্ডের কারণে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া অন্য কোনো দলকে আস্থায় আনতে পারছেন না নরেন্দ্র মোদি। তাই বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও শেখ হাসিনার সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা বা অপসারণের কোনো প্রক্রিয়ায় মোদি সরকার কোনোভাবেই সহযোগিতা করবে না। এই অবস্থানের কথা খোদ শেখ হাসিনাকে জানাবেন নরেন্দ্র মোদি। ইতোমধ্যে গত চার মাসে জেসিসিসহ বিভিন্ন বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের এই অবস্থানের ব্যাপারে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
আরো জানা গেছে, মোদির সরকার আল-কায়েদাসহ নানা সন্ত্রাসমূলক ও ভারতবিরোধী অপতৎপরতা ঠেকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঝুলে থাকা দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধানে কাজ করছে। আর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরো উন্নত করার জন্য তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সই ও স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ স্পর্শকাতর ও বিবাদমান ইস্যুগুলো সমাধানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩২:৩৫ ৩৬২ বার পঠিত