বঙ্গ-নিউজ:রাজধানী ও এর আশপাশে দেড় শতাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল সেমাই। অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে তৈরি এই সেমাই বাহারি প্যাকেটে বাজারজাত করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্যাকেটে সাঁটানো হচ্ছে নামী-দামি ব্র্যান্ডের লেবেল। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সেমাই দেদার বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এ উল্লেখ রয়েছে, বেকারিপণ্য তৈরির সময় কারখানার ভেতর কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিশেষ পরিচ্ছন্ন পোশাক ও হাতে গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেমাই উৎপাদন কারখানাগুলোতে এসব নিয়ম মানছেন না কেউই। সেমাই প্রস্তুতকারী এক ব্যবসায়ী জানান, ঈদকে টার্গেট করে বাজার ধরতে কয়েক মাস আগ থেকেই সেমাই তৈরির কারখানাগুলো সচল হয়ে যায়। তখন সরকারি বিধিবিধান পালন করার কারো সময় থাকে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ময়দার সাথে ৭০ শতাংশ সয়াবিন তেল, ৩০ শতাংশ ডালডা দিয়ে সেমাই তৈরির নিয়ম থাকলেও সেমাই উৎপাদনকারীরা তা মানছেন না। তারা ডালডার দাম কম থাকায় সয়াবিন তেলের পরিবর্তে সেমাই তৈরির ক্ষেত্রে শতভাগ ডালডা ব্যবহার করছেন। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ দিন মচমচে রাখতে মোটরযানে ব্যবহৃত পোড়া মবিলও সেমাইয়ের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। সরেজমিন জানা গেছে, রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ কামরাঙ্গীরচরের বিস্তীর্ণ জনপদে সেমাই তৈরির প্রায় ২০টি কারখানা রয়েছে। খোদ কামরাঙ্গীরচর থানার পেছনের একটি কারখানায় পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দেদার তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নকল সেমাই। থানার পেছনে কলেজ রোডে গিয়ে দেখা গেছে একটি কারখানার প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে সেমাই তৈরির মেশিনের ঘটঘট শব্দ। স্থানীয়রা জানান, ওই কারখানার মালিক সোনা মিয়া। দিন-রাত কারখানার গেটে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে সেমাই উৎপাদন করছেন শ্রমিকেরা। ঈদ সামনে তাই কারখানার ভেতর সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারখানার মালিক-শ্রমিকেরা। সূত্র জানায়, কামরাঙ্গীরচরের হুজুরপাড়ায় আনিসের সেমাই কারখানা, বেইলি রোডে চৈতালি সেমাই কারখানা, খালপাড় রোডে মুসলিম, মো: আলী, নাছির ও পোস্তা রহমানের ভেজাল সেমাই তৈরির কয়েকটি কারখানা রয়েছে। বড়গ্রাম, মাদবরবাজার, পাকাপুল, খোলামোড়াঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০টি ভেজাল ও নকল সেমাই তৈরির কারখানা রয়েছে। ওই সব কারখানার প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হলেও ভেতরে সেমাই তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তালাবদ্ধ এসব কারখানায় সেমাই উৎপাদন করা হচ্ছে। ঝামেলা এড়াতে কারখানাগুলোর বাইরে সতর্ক প্রহরায় থাকেন মালিকপক্ষের নিয়োজিত সোর্স। কারখানার সামনে ও আশপাশে পুলিশ প্রশাসন বা অপরিচিত লোক দেখলেই মুঠোফোনে মালিককে জানিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, লালবাগ, চকবাজার, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, মিরপুর, মুগদা ও রাজধানীর পাশের কেরানীগঞ্জ, সাভার-আশুলিয়ায় ভেজাল ও নকল সেমাই তৈরির দেড় শতাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ভেজাল ও নকল সেমাই প্রতিদিন ভ্যান-টালিগাড়ি ছাড়াও ট্রলারে পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার, ছোটকাটারার পাইকারি মার্কেটসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে। বছরের বেশির ভাগ সময় এসব কারখানায় সেমাই উৎপাদন ঢিলেঢালা থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ভেজাল ও নকল সেমাই তৈরির মহোৎসবে মেতে ওঠেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কয়েক মাসে ব্যবসায় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অধিক মুনাফালোভী সঙ্ঘবদ্ধ এসব ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি ঈদের আগে ভেজাল সেমাই কারখানায় অভিযান চালানো হলেও এবারে একেবারেই চুপ প্রশাসন। তবে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভেজালের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:০০:০২ ৩৬২ বার পঠিত