বঙ্গ-নিউজ ডট কম: ভোর ৪টা থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে মুষলধারে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে টাইফুনের বিষয়টি ছিল কোরিয়ার জনগণের মুখে মুখে; বিশেষ করে ইনচনবাসীর। গত এশিয়াডের রৌপ্যজয়ী বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলে চিন্তার ভাজ। প্রতিপক্ষ নেপাল। কোয়ার্টারে তাদের বিপক্ষে জয় পাওয়া একেবারে সহজ। সেখানে বৃষ্টির কারণে যদি টসভাগ্য সহায় না হয় তাহলে তো সাধ আহাদ একেবারে মাটি। কিন্তু প্রকৃতির রহস্য কে বুঝতে পারে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা বাজতেই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে সূর্যের প্রখরতা। যথাসময়ে আম্পায়াররা পিচ পর্যবেক্ষণ করে খেলার উপযুক্ততা ঘোষণা করেন। হাসি ফোটে বাংলাদেশ শিবিরে। সেই হাসি আরো দ্বিগুণ হলো ম্যাচ শেষে। কারণ নেপালকে ৮১ রানে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে সালমা বাহিনী। আজ সেমিফাইনালে বাংলাদেশ লড়বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এক অর্থে ওই ম্যাচই এখন মুখ্য বাংলাদেশ দলের। অপর সেমিফাইনাল খেলবে পাকিস্তান ও চীন। ফাইনাল হবে আগামীকাল।
ক্রিকেট অপ্রচলিত খেলা দক্ষিণ কোরিয়ায়। ১ শতাংশ মানুষও পাওয়া যাবে না যারা ক্রিকেট বোঝেন। ক্রিকেট এখানে শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। এশিয়ান গেমসকে ঘিরে সুন্দর অবকাঠামোও তৈরি হয়েছে এখানে। ইনচন শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অস্থায়ী ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এশিয়ান গেমসের ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এখানে এশিয়ান গেমসে পদকের লড়াইয়ে নামবেন সাকিব-মাশরাফিরা। গুয়াংজু এশিয়ান গেমসের ফাইনালিস্ট হওয়ায় সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছে মহিলা ক্রিকেট দলও। গতকাল দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মেয়েরা আগে ব্যাট করে সম্মানজনক স্থানে নিয়ে যান। পরে বোলাররা এসে নেপালের ব্যাটসম্যানদের বিধ্বস্ত করেন। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১০৭ রান করার পর নেপাল ১৫.২ ওভারে মাত্র ২৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্বে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসা নেপাল দল বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি। উইকেট স্লো হওয়ায় টস জিতে বাংলাদেশ দলকে ব্যাটিং করার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেন নেপালের অধিনায়ক বেলবাসি। টি-২০ ক্রিকেট রান বন্যার ম্যাচ হলেও মহিলা ক্রিকেটাররা কিন্তু সেই স্লো পিচে তাল মেলাতে পারেননি। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রান বন্যায় ভাসাতে পারেননি। রান করেছেন মূলত একজনই। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আয়শা রহমান শুকতারা। তার ব্যাট থেকেই এসেছে অপরাজিত ৫১ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল অতিরিক্ত ১৬। এ ছাড়া শাহনাজ পারভীন ১২ ও লতা মণ্ডল করেন ১১ রান। আয়শা রহমান ৫১ রান করলেও তিনি বল খেলেছেন ৬০টি। গোটা ইনিংসে কোনো ছক্কা ছিল না। চার ছিল দু’টি। তাও এসেছে আয়শার ব্যাট থেকে। শেষ ওভারেই এসেছে দুই অঙ্কের রান ১৩। আয়শা বলের ব্যবহার বেশি করলেও এক প্রান্ত আগলে রাখায় উইকেটের মড়ক লাগেনি; যে কারণে স্লো উইকেটেও বাংলাদেশ দল শতরানের ওপরে করতে সক্ষম হয়।
সালমা বাহিনী যে এভাবে নেপালের ব্যাটসম্যানদের ভরাডুবি ঘটাবেন, তা ছিল সবার ভাবনার বাইরে। নেপালের ইনিংস ২, ১, ০, ৮, ০, ১, ২, ১, ১, ০, ০ (অপ:)। তাদের সাজঘরে ফেরানোর কারিগর কখনো সালমা, কখনো রুমানা, জাহানারা-ফাহিমা। সালমা ৩ ওভারে ১ রানে নেন ৩ উইকেট। রুমানাও ২.২ ওভারে ৪ রানে ৩ উইকেট। ফাহিমা ২ ওভারে ২ রানে ও জাহানারা ৩ ওভারে ১৩ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ শেষে আয়শা রহমান শুকতারা বলেন, ‘আগেও আমরা নেপালের বিপক্ষে খেলেছি। ওদের খেলা দেখে মনে হলো অনেক উন্নতি করেছে। আমাদের খেলার এমন ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ফাইনালে যেতে পারব। আগে এসে আমরা উইকেট দেখে গেছি। উইকেট স্লো ছিল। বল নিচু হয়ে আসছিল। এখানে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলে আমার মনে হয় না, অতটা ভালো খেলা যাবে। আমার মনে হয় নিচু হয়ে সিঙ্গেলের ওপর খেললে ভালো হবে। জোরে মারলেও বল যেতে চাইছিল না।’ সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা দল সম্পর্কে আয়শা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা দলের ব্যাটিং, ফিল্ডিং, বোলিং সব বিভাগই ভালো। আমার মনে হয় ব্যাটিংটা আরো ভালো করতে পারলেই তাদের বিপক্ষে জেতা সম্ভব। মূল কথা হলো ১১০ বা ১২০ রান করতে পারলেই আমরা জিতব। তবে ফিল্ডিং, ব্যাটিং ও বোলিং তিনটি ডিপার্টমেন্টেই আমাদের সেরাটা দিতে হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৭:০৮ ৯২৮ বার পঠিত