বঙ্গ-নিউজ:নিজস্ব প্রতিবেদক-আল রিআন:আল্লাহ রব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৎপথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে আম্বিয়া-ই কিরাম প্রেরণ করেছেন। আদম آدم (আঃ) মানব জাতির জনক (আবু’ল-বাশার), উপাধী সাফিয়্যুল্লাহ অর্থ-আল্লাহর মনোনীত, যাঁকে ফিরিশতাগণ সিজদা করেছেন, (মাস্জূদু’ল-মালাইকাঃ) দুনিয়ায় আল্লাহর প্রতিনিধি (খলীফাতুল্লাহ ফি’ল আরদ) ও প্রথম নবী। آدم শব্দটির বুৎপত্তির ব্যাপারে ভাষাবিদগণের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শব্দটি আরবী না অনারবী, এ সম্পর্কে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত পোষণ করেন। ইব্ন দুরায়দ آدم শব্দটির দু’ধরনের বুৎপত্তির বর্ণনা করেছেন : (১) آدم শব্দটি أدمة শব্দ হতে উৎপন্ন অর্থ গৌরবর্ণ। (২) آدم শব্দটির অর্থ শুভ্র যথা ظبى آدم অথবা جمل آدم অর্থাৎ এমন হরিণ বা উষ্ট্র যার পেট শুভ্র বর্ণের। আবূ মানসূ’র আল-জাওয়ালীকী’র মতে সকল আম্বিয়া (‘আঃ)-এঁর নাম অনারবী তবে আদম (আঃ), সালিহ (আঃ), শু’আয়ব (আঃ) এবং মুহাম্মদ (সঃ)-এঁর নাম এর ব্যতিক্রম। জাওহারীও آدم শব্দটিকে আরবী বলে বর্ণনা করেছেন। কোনো কোনো ব্যাকরণবিদ آدم শব্দটি آديم (উপরিভাগ অথবা চর্ম যথা آديم الارض অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ) শব্দ হতে উদ্ভূত বলে মত প্রকাশ করেছেন। আদম (আঃ)-কে ভূ-পৃষ্ঠ হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। কেউ কেউ আবার آدم শব্দটিকে آدم (আদম) অথবা آدمة শব্দ হতে গৃহীত বলে বর্ণনা করেছেন এবং এর অর্থ সমন্বিত ও সংমিশ্রিত। এ অর্থ দ্বারা আদম (আঃ)-এঁর মধ্যে বিভিন্ন শক্তি ও উপাদানের সমন্বয় ও সংমিশ্রণ ঘটেছে বুঝায়। কেননা মাটি ও পানির মিশ্রণে তাঁর খামির প্রস্তুত করা হয়েছিল। কেউ কেউ আবার آدم শব্দটিকে آدمة শব্দ হতে উদ্ভূত বলে বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ অনুসরণযোগ্য। কিন্তু যামাখশারী آدم শব্দটিকে আরবী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। آدم শব্দটির বহুবচন اوادم এবং এর تصغير (ক্ষুদ্রত্ব বোধক রূপ) اُويدم দ্বারা এটাই প্রতিপন্ন হয় যে, শব্দটি অন-আরবী, অন্যথায় উভয় রূপেই همزة অপরিবর্তিত থাকত।
হিব্রু ভাষায় آدم শব্দের অর্থ মানবজাতি, ফিনিশীয় এবং সাবাঈ ভাষায়ও শব্দটির একই রূপ। ইংরেজি সাহিত্য ও অন্যান্য ভাষায় آدم এবং آدم وحواء শব্দ ইঞ্জীল এবং তাওরাতের মাধ্যম প্রচলিত হয়েছে। বাইবেলের আদী পুস্তকে উল্লেখ আছে যে, আদম (আঃ) তাঁর স্ত্রীর নাম حواء এ জন্য রেখেছিলেন যে, তিনি জীবকুলের মাতা। آدم এবং آدم وحواء-এর অর্থ কোনো বিষয়ের জন্মদাতা, গোত্র বা জাতির বড় নেতা এবং আদীপুরুষ। যেমন “দাক্ষিণাত্যের ওয়ালী উ’রদূ কবিদের বাবা আদম ছিলেন।”
হযরত আদম (আঃ)-এঁর সৃষ্টির রহস্য
আল-কুরআন আল-কারীমের পাঁচটি স্থানে آدم শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। আদম সৃষ্টি এবং নিষিদ্ধ বৃক্ষের ঘটনা বর্ণনায় সূরা তা’হা : وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى آدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا “আমি তো ইতঃপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।” আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন : وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ “আমি তো মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হতে।” وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ “স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাগণকে বললেন, ‘আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করতেছি।” إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ-فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ-فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ-إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنْ الْكَافِرِينَ-قَالَ يَاإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَاسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنْ الْعَالِينَ-قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ-قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ- وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ-قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ-قَالَ فَإِنَّكَ مِنْ الْمُنظَرِينَ-إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ-قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ-إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمْ الْمُخْلَصِينَ-قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ-لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ “স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বলেছিলেন, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করতেছি কর্দম হতে, যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হও। তখন- ফিরিশতারা সকলেই সিজদাবনত হলো- কেবল ইবলীস ব্যতিত। সে অহংকার করলো এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলো। তিনি বললেন, ‘হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কীসে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন?’ সে বলল, ‘আমি তা হতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কর্দম হতে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি এখান হতে বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত। তোমার উপর আমার লা’নত স্থায়ী হবে, কর্মফল দিবস পর্যন্ত।’ সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন উত্থান দিবস পর্যন্ত।’ তিনি বললেন, ‘তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত হলে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’ সে বলল, ‘আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি ওদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব, ‘তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয়।’ তিনি বললেন, ‘তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি, ‘তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।” قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَإِنَّ جَهَنَّمَ جَزَاؤُكُمْ جَزَاءً مَوْفُورًا “আল্লাহ বললেন, ‘যাও, তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, তবে জাহান্নামই তোমাদের সকলের শাস্তি, পূর্ণ শাস্তি।” وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنْ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا “এবং স্মরণ কর, আমি যখন ফিরিশতাগণকে বলেছিলাম, ‘আদমের প্রতি সিজদা কর, তখন তারা সকলেই সিজদা করলো ইবলীস ব্যতীত; সে জিনদের একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করলো। তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে ওকে এবং ওর বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ? ওরা তো তোমাদের শত্রু। যালিমদের এ বিনিময় কত নিকৃষ্ট।”
وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُنْ مِنْ السَّاجِدِينَ- قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ- قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنْ الصَّاغِرِينَ- قَالَ أَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ- قَالَ إِنَّكَ مِنْ الْمُنظَرِينَ- قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ- ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ-قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ-وَيَاآدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنْ الظَّالِمِينَ-فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَوْآتِهِمَا وَقَالَوَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنْ الْخَالِدِينَ- وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنْ النَّاصِحِينَ-فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُلْ لَكُمَا إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُبِينٌ- قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنْ الْخَاسِرِينَ- قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَى حِينٍ -قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ
“আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করি, এরপর তোমাদের আকৃতি দান করি এবং তৎপর ফিরিশতাদের আদমকে সিজদা করতে বলি; ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করলো। সে সিজদাকারীদের অন্তভুক্ত হলো না। তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কীসে তোমাকে নিবৃত্ত করলো যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, ‘আমি তার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছ এবং তাকে কর্দম দ্বারা সৃষ্টি করেছ।’ তিনি বললেন,‘এ স্থান হতে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে? তা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও, তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ সে বলল, ‘পুনরূত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও।’ তিনি বললেন, ‘যাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছে তুমি অবশ্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে। সে বলল, তুমি আমাকে শাস্তিদান করলে, এ জন্য আমিও আপনার সরল পথে মানুষের জন্য নিশ্চয় ওঁত পেতে থাকব। ‘এরপর আমি তাদের নিকট আসবই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, দক্ষিণ ও বাম দিকে হতে; তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবে না।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৮:৪০ ৫০১ বার পঠিত