বঙ্গ-নিউজ-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের বর্তমান মেয়াদে ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বপ্নের এই প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং মূল সেতুর নদী শাসন ও নির্মাণ কাজ একই সাথে শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ গোপালগঞ্জে তার দিনব্যাপী সফর কর্মসূচিতে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক সমাবেশে একথা বলেন। তিনি সকালে এখানে পৌঁছান।
কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে তারা দুর্নীতির অনেক অপবাদ দিয়েছে। এনিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম যে, এ প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি। এখন এটা প্রমাণিত যে ওই অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে তাদের এই ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা তাদের অর্থায়ন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে কিছু মানুষ রয়েছেন, তাদের আমাদের কোনো কাজই ভালো লাগে না। তারা সব সময় আমাদের সব কাজে কিন্তু খোঁজে। তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার তীব্র বাসনা রয়েছে। কিন্তু দেশ পরিচালনা করা ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা তাদের নেই। টেলিভিশন চ্যানেল ও এয়ারকন্ডিশন রুম তাদের পছন্দের জায়গা। সেখানে বসে তারা আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরাই সবার আগে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যেতে সহায়তা করছি। এখন তারাই আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছেন।
তিনি তাদেরকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির দোসর ও পদলেহনকারী ও ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা হিসেবে অভিহিত করেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার শেখ ফজিলা অননও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার ৫৫ গ্রামের ১২ হাজার পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ, টুঙ্গিপাড়ায় ৫ কেভিএ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবনে ৩০ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলের উদ্বোধন করেন।
এছাড়া তিনি রাজাপুর খেয়াঘাট-জহরেরকান্দি সড়কে ৩৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ, পূর্ব লাটেঙ্গা-পশ্চিম লাটেঙ্গা সড়কে ১৭ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সোনালী ব্যাংক ভবন উদ্বোধন করেন।
স্বনির্ভর দেশ গড়তে তার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে এবং জাতিকে আধুনিক ও শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা অন্যের কাছে হাত পাতবো না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। তার সরকার এই অঞ্চলের উন্নয়নে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি দক্ষিণাঞ্চলে পায়রাবন্দর ও একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি তার বর্তমান মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। দেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শহরের মানুষের জন্য ফ্যাট নির্মাণের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায়ও আবাসিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নেও আবাসিক ফ্যাট নির্মাণ করা হবে। দেশে কোনো কাঁচা ঘরবাড়ি থাকবে না।
সাম্প্রতিক বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের জন্যও গৃহায়ণের ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা কখনও পিছু হটবো না এবং জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। কৃষি উন্নয়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধাসহ আমরা কৃষকদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ইস্যুতে তার সরকার বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। তার সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
তিনি বলেন, তার সরকার এক কোটি লোকের চাকরির সংস্থান করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রায় ২৪ লাখ লোক চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কল্যাণে তিনি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনেও আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি।
বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছাড়া জাতিকে আর কিছুই দিতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে তারা সব ধরনের জঘন্য অপরাধ করেছে।
প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার তার দলের নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার সরকার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এ কর্মসূচির আওতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, কয়লা ও বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ৩০ লাখ সোলার প্যানেল তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৬:৩৮ ৩০৫ বার পঠিত