বঙ্গনিউজ-সম্প্রতি ভারতীয় দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়া দিপিকার ছবিসহ একটি প্রতিবেদন ছাপার পর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান অভিনেত্রী দিপিকা পাড়ুকোন। এরপর জল গড়িয়েছে বহু দূর। ১৯শে সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়ে নিজের শেষ কথা জানিয়ে দিলেন এই অভিনেত্রী।
গ্লিটজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই চিঠি:”আমার দৃষ্টিভঙ্গী…
একজন নারীর যৌনমিলনে সম্মতির একটাই প্রকাশ একটাই, আর তা হলো যখন সে ‘হ্যাঁ’ বলে।
উপরের বাক্যটি লেখার কারণ হলো আমরা সবাই জানি ভারতে আমরা সবাই জোর চেষ্টা চালাচ্ছি সমাজের কিছু অংশের মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার যাতে আমরা বৈষম্য, ধর্ষণ, ভয় এবং যন্ত্রণামুক্ত একটি সুখী সমাজের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।
আমার পেশার ব্যাপারে বোকা সাজবো না; সে জন্য আমাকে অনেক কিছুই করতে হয়। একটি চরিত্রের জন্য হয়তো আপাদমস্তক ঢাকা পোশাক পরলাম, অন্য চরিত্রে সম্পূর্ণ নগ্ন হওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে এবং একজন অভিনেতা হিসেবে এটা আমার সিদ্ধান্ত আমি কি করবো। বুঝতে হবে যে এটা চরিত্র, আসল মানুষটা নয় এবং আমার কাজ হচ্ছে যে চরিত্র রূপায়নের দায়িত্ব আমি নিয়েছি তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা।
যে বিষয়টি আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তা আমি পরিস্কারভাবে তুলে ধরছি, দয়া করে একে শাহরুখের এইট-প্যাক কিংবা অন্য কোনো নারী বা পুরুষের দৈহিক গঠনের সঙ্গে মেলাবেন না। আমি একটি আদর্শিক অবস্থানের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি আর সেটা হলো, নারীর সমতা আর ক্ষমতায়নের জন্য লড়াইয়ের ওই সময়েও পাঠককে আকর্ষিত করতে এ ধরনের পশ্চাৎপদ কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরুষশাসিত এই সমাজে নারীর অগ্রযাত্রাকে যখন স্বাগত জানানো উচিৎ, তখন আমরা পর্দা আর বাস্তবের পার্থক্য ঘুঁচিয়ে দিচ্ছি আর এক বছর পুরোনো একটি খবরকে শিরোনামে এনে আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছি। একটি পুরোনো প্রতিবেদন মাটি খুঁড়ে বের করে এনে সেটার “ওএমজি: দিপিকার স্তনের ভাঁজ দেখা যাচ্ছে” - এমন শিরোনাম দিয়ে পাঠক টানার চেষ্টা করা, প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা ব্যবহার করে পশ্চাৎপদ চিন্তাকে ছড়িয়ে দেওয়ার শামিল।
যখন কোনো অভিনেত্রীর অন্তর্বাস পোশাকের তলা থেকে উঁকি দেয়, তিনি কোনোভাবেই সেটা ইচ্ছা করে করেন না। কাজেই সেটাকে বড় করা, চারপাশে গোল দাগ দেওয়া এবং সেটার দিকে তীর নির্দেশ করার চেয়ে আমরা কি তাকে একটু ‘সম্মান’ দেখাতে পারি না এবং সেটাকে ‘শিরোনাম’ না বানিয়ে সেটার কথা ভুলে যেতে পারি না? আমরা কি মানুষ নই? হ্যাঁ আমরা বিস্মিত হই, হিংসা করি এবং আমাদের জিভে জল চলে আসে চলচ্চিত্রে একজন অভিনেতার এইট-প্যাক সম্বলিত দেহ দেখে, কিন্তু তিনি যখন জনসম্মুখে আসেন আমরা কি তার গোপন অঙ্গের দিকে ক্যামেরা তাক করে রাখি এবং ‘সস্তা শিরোনাম’ বানাই?
নিজের দেহ নিয়ে গর্ব করতে আমার কোনো সমস্যা নেই এবং পর্দায় একটি চরিত্রকে তুলে ধরতে যে কোনো কিছু করতেও দ্বিধা নেই। আমার পরবর্তী চরিত্রটিই এক পানশালার নর্তকীর (বলে দেওয়ার জন্য দুঃখিত ফারাহ!) যে জীবিকার তাগিদে পুরুষদের কামোদ্দীপ্ত করে। আমার সমস্যা হচ্ছে একটি চরিত্র নয় একজন মানুষের পণ্যায়নকে প্রচার করা। আমার চরিত্রকে যত ইচ্ছা বিশ্লেষণ করুন, যদি আগ্রহ থাকে তবে চরিত্রটির বুকের আকার এবং পায়ের দৈর্ঘ্য্য নিয়েও আলোচনা করুন। আমি কেবল পর্দার বাইরে একজন নারী হিসেবে সম্মান দাবি করছি।
এটা স্তন, পুরুষাঙ্গ কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের বিষয় নয়। প্রসঙ্গটা কি আর কেবল একটি শিরোনাম বেঁচতে কতটা প্রসঙ্গের বাইরে যেয়ে কথা বলা হয়েছে সেটাই হচ্ছে বিষয়। এবং এমন একটা সময়ে যখন নারীর প্রতি আচরণের পরিবর্তন হওয়াটা খুবই জরুরী।
আমার জন্য এই বিষয়ের এখানেই সমাপ্তি ঘটছে। সবারই নিজের মত দেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমার এটা নিয়ে কথা বলার আর কোনো ইচ্ছা নেই যেহেতু এটা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মনোযোগ পাবে এবং বিষয়টিকে আরও বেশি দুমড়ে মুচড়ে, আরও বদলে দিয়ে অপ্রয়োজনীয় শিরোনাম তৈরি করা হবে যাতে বিক্রি বাড়ে।
এটা বলেই কথা শেষ করছি। আমরা যেন একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, সততা এবং সম্মান প্রদর্শন করি।
ভালোভাবে বাঁচুন, হাসুন এবং অনেক ভালোবাসুন
দিপিকা পাড়ুকোন
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৮:২৪ ৩৭৩ বার পঠিত