বেড়েছে ক্ষমতাসীনদের স্ত্রীর সম্পদ

Home Page » জাতীয় » বেড়েছে ক্ষমতাসীনদের স্ত্রীর সম্পদ
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪



woman_bg_820082158.jpgবঙ্গ-নিউজঃকারো স্বামী ছিলেন মন্ত্রী। কারোবা স্বামী সংসদ সদস্য। জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে কতোটুকু কি করেছেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও রাতারাতি যার যার স্ত্রীর ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন তারা। বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনেছেন বিগত মহাজোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের স্ত্রী।

গত পাঁচ বছরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের স্ত্রী ইলা হক, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের স্ত্রী হাসিনা সুলতানা, সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী প্রীতি হায়দার, রাজশাহীর বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের স্ত্রী তহুরা হক এবং কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান ওরফে বদির স্ত্রী শাহিনা আক্তার সাকির সম্পদ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দুদক স্বামীর পাশাপাশি তাদের স্ত্রীদেরও পৃথকভাবে সম্পদের অনুসন্ধান করছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব জনপ্রতিনিধির স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। এছাড়া দুদকের কাছে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতেও এদের বিরুদ্ধে সম্পদ গোপণের অভিযোগ রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক বিগত মহাজোট সরকারের সাত মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি স্ত্রীদের সম্পদের ওপরও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। গতমাসে কমিশন দুদকের অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বামী ও স্ত্রীর ওপর আলাদাভাবে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলে। এ কারণে মান্নান খান, মাহবুব ও বদির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও তাদের কারো স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়নি।

দুদকের একটি সূত্র বলছে, সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখে ইলা, হাসিনা, প্রীতি, তহুরা এবং সাকির ওপর পৃথকভাবে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।দুদক গত ৮ মাস রাজউক, জেলা রেজিস্ট্রার দপ্তর, সাব-রেজিস্ট্রি, ভূমি অফিস, ডাক বিভাগ, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, স্টক এক্সচেঞ্জ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানিসহ প্রায় ২৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের সম্পদের তথ্য নেয়।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, বিগত মহাজোট সরকারের এসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অর্থ সম্পদ করেছেন। যেসব সম্পদের বেশিরভাগই ছিলো স্ত্রীদের নামে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, যেসব জনপ্রতিনিধি অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তারা রাজনীতি করেছেন ক্ষমতায় থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য। ক্ষমতা মানেই তাদের কাছে ছিলো লোভের জায়গা এবং আর্থিক লাভের জায়গা। যার সুবিধা নিজে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা নিয়েছেন। এতে রাষ্ট্র এবং জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ এর নির্বাচনী হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে কিভাবে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বাড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও দুদককে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। দুদকের উচিত ব্যক্তি না দেখে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া।

দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, স্বামী জনপ্রতিনিধি থাকলেও তারা কৌশলে স্ত্রীদের নামে সম্পদ গড়েছেন। বিগত সরকারের যে কয়জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান-তদন্ত করছে তাদের প্রায় প্রত্যেকের স্ত্রীর বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাওয়া গেছে। যে সম্পদ এর সঙ্গে তাদের স্বামীর বৈধ আয় বা তার অর্জিত আয়ের মিল নেই। এটা দুদকের কাছে ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ হিসেবে ধরা দিয়েছে। এছাড়া দুদকের কাছে সম্পদ গোপনও করেছেন কেউ কেউ।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে রাজশাহী ৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের স্ত্রী তহুরা হকের বিরুদ্ধে ৪৯ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে দুদক। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তহুরা হকের ওপর অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ-পরিচালক যতন কুমার রায়।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হকের স্ত্রী ইলা হকের প্রায় দেড় কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে দুদক। ইলা হক ও ছেলে জিয়াউল হকের রাজধানী ঢাকা ও সাতক্ষীরায় বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ও প্লটের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই মামলার সুপারিশ চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

মান্নান খানের স্ত্রী হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও সম্পদ গোপণের সুপারিশ চেয়ে প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে কমিশনে প্রতিবেদনটি অনুমোদনের অপেক্ষায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মান্নান খান স্ত্রীর পেশা ‘গৃহিণী’ উল্লেখ করলেও অন্যত্র স্ত্রী মাছের ব্যবসা করেন বলেও তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া ইউরোপ ভ্রমণকালে তার স্ত্রী বিপুল পরিমাণ অর্থ উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলেও দাবি করেন দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে। এভাবে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার যৌক্তিক কোনো উৎস দেখাতে পারেননি হাসিনা সুলতানা। ফলে দুদক আইনের ২৬(২) এবং ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অনুমোদন চাওয়া হয় অনুসন্ধান প্রতিবেদনে। হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছেন দুদকের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন।

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী প্রীতি হায়দারের নামেও কয়েকশ’ একর জমি রয়েছে পটুয়াখালীতে। এছাড়া ‘আন্ধারমানিক’ ও ‘গঙ্গামতি’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাহবুবুর রহমান ও প্রীতি হায়দারের। নবম সংসদের হলফনামা অনুসারে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামে এখন ১ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রটি জানিযেছে, প্রীতি হালদারের প্রায় দশ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক যাছাই-বাছাই করে তার সম্পদ দেখছে। দুদকের উপ-পরিচালক খায়রুল হুদা তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছেন।

কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান ওরফে বদির স্ত্রী শাহিনা আক্তার সাকির বিপুল জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ-সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। যা তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত অনুসন্ধানে প্রায় দেড় কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে। অনুসন্ধানে তার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে দুদক। সাকির বিরু্দ্ধে অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ পরিচালক মো. আবদুস সোবহান। -

বাংলাদেশ সময়: ৮:০৩:১৭   ৩৭৮ বার পঠিত  




জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ