বঙ্গ-নিউজঃজয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর ধামসন্ধ্যা গ্রামের অসহায় তমেজা বিবি ছাগল পালন করে ভিক্ষার হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করেছেন। সংসারে খরচের জন্য তাকে আর পেছনে তাকাতে হয় না।
তমেজা বিবি জানান, দু’শতাংশ জমির উপর বাড়ি ছাড়া কিছুই নাই তাদের। স্বামী মোকসেদ আলী হাটে-বাজারে ঘুরে গামছা বিক্রির সামান্য রোজগারে যখন সংসার চলে না তখন অন্যের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এক ছেলেসহ খেয়ে না খেয়ে চলতো দিন। সংসারে অভাবের কারণে ছেলের লেখা পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। অল্প বয়স হলেও অনটনের ছাপ পড়ে তমেজা বিবিসহ স্বামী ও ছেলের শরীরে। বাইরে আয় বর্ধনমূলক কোন কাজ করতে না পারায় স্ত্রীর ছাগল পালনে সহযোগিতা করে থাকেন স্বামী মোকসেদ আলী। টাকার অভাব বোধ করায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছা থেকে তমেজা বিবি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ্যাহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন (এসো)তে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে ছাগল পালনের উপরে প্রশিক্ষণসহ ৪ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ টাকায় একটি ছাগি কিনে শুরু করেন ছাগল পালন। বর্তমানে তমেজা বিবি’র খামারে ২০টি ছাগল রয়েছে, যার একেকটির মূল্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। ছাগল পালন প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ছাগল পালনের পাশাপাশি বসত বাড়ীর পাশে লিজ নেয়া জমিতে শাক-সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন করেন তিনি । ছাগল বিক্রির টাকায় ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচের পাশাপাশি কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না তমেজার। আট বছর আগে ৪ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ২০ হাজার টাকা, এছাড়াও মৌসুমি ঋণ রয়েছে ১০ হাজার।
তমেজা এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন এবং দেড় বিঘা জমি পত্তন নিয়ে ধান, আলুসহ অন্যান্য ফসল চাষে স্বামীকে সহযোগিতা করে থাকেন। ছেলেকে কম্পিউটার কিনে দিয়েছেন সে পড়াশুনা করার পাশাপাশি স্থানীয় শিবপুর বাজারে ব্যবসা করছে। এরকম আয় বর্ধনমূলক নানা কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন তমেজা বিবি। তাকে দেখে ওই এলাকার অসহায়, দুঃস্থ ও বেকার মহিলারা তাদের সংসারের এখন আয় বর্ধনমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। তমেজা শিবপুর ধামসন্ধা গ্রামের অন্যান্য অসহায় নারীদের কাছে বর্তমানে অনুকরণীয়। ওই এলাকার অসহায় দুঃস্থ মহিলা শাহিনা, বিলকিস, স্বপ্নাসহ আরও অনেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ছাগল পালন, বসত বাড়ীর আশপাশে শাক-সবজি চাষ আবার কেউবা হাঁস-মুরগি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর ধামসন্ধা গ্রামে গিয়ে দুঃস্থ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় বে-সরকারি সংস্থা ‘এসো’ থেকে ঋণ নিয়ে ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন করে বদলে ফেলেছে তাদের সংসারের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের চোখে মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। সংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই ছেলে মেয়েদের প্রথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে পারেননি। নেমে পড়তে হয়েছে জীবিকার সন্ধানে। স্বল্প বয়সেই জীবন সংগ্রামের কঠিন তাগিদে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে।
সমাজে সব মহিলারাই স্বপ্ন দেখে সৎ উপার্জনে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বড় হওয়ার। আর এই বড় হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে খোঁজ মেলে ছাগল পালন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির। এসো’র নির্বাহী পরিচালক মতিনুর রহমান বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাগল পালন কর্মসূচির সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন করে অসহায় নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং পাশাপাশি সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৪:৩৭ ১৯২৫ বার পঠিত