বঙ্গ-নিউজ ডটকম :৮৭ বছর আগে ময়মনসিংহে এসেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেইদিনের সেই স্মৃতি আজো অম্লান। সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহবাসী রবীন্দ্র স্মৃতিকে ভুলতে পারেনি। শহরের টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভেতর সেই আলেকজান্ডার ক্যাসেল, সেই বটমূল স্মরণ করিয়ে দেয় এখানে কবি সময় কাটিয়েছিলেন। ময়মনসিংহে রবীন্দ্রনাথের আগমন, থাকা, অবস্থান, সংবর্ধনার সেই দিনগুলো এক উজ্জ্বল স্মৃতি। আট দশক পেরিয়ে গেলেও যা বিন্দুমাত্র বিবর্ণ হয়নি। ৮৭ বছর আগের সেই রবীন্দ্র সফর ময়মনসিংহের সাহিত্যাঙ্গণে অবিস্মরণীয় এবং প্রভাব সঞ্চারী। জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে এসেছিলেন ও তিনি তার প্রতিষ্ঠিত শান্তি নিকেতনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। ময়মনসিংহের শিক্ষিত ও সুশীল সমাজ এক্ষেত্রে ছিলেন আবেগ উদ্দীপ্ত। সার্বজনীন সংবর্ধনা কমিটি আয়োজিত ৫টি অনুষ্ঠানে কবি গুরুকে ময়মনসিংহ বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দিয়েছিল। ‘বিংশ শতাব্দীর সেই সন্ধিক্ষণে শিক্ষা বিস্তারে ময়মনসিংহ যে সাড়া দিয়েছিল তা কবিকে অভিভূত করে। সুতরাং এ সফরকে নিছক অর্থ সংগ্রামের মিশন বলা যাবে না’ বললেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আফজাল রহমান। ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি ঐতিহাসিক টাউন হলে এক সভায় কবিকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার লক্ষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে গঠিত হয় অভ্যর্থনা কমিটি। আনন্দমোহন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ড.জে.ঘোষ এতে সভাপতিত্ব করেন। মহারাজা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীকে সভাপতি ও ডা. বিপীন বিহারী সেনকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কবি গুরুর ময়মনসিংহ সফরকে ঘিরে সপ্তাহব্যাপী প্রস্তুতি পর্ব চলে। প্রায় অর্ধ-ডজন সংগঠন রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। সেই সময়ে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রখ্যাত পত্রিকাগুলো রবীন্দ্রনাথের ময়মনসিংহ সফরকে ফলাও করে কভার করে। অবশেষে ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি দুপুরে ঢাকা থেকে রেলপথে কবিগুরু ময়মনসিংহে এসে পৌঁছান। তখন বিকেল। রেলস্টেশন চত্বরে তাকে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে উষ্ণ অভিনন্দন ও স্বাগত জানানো হয়। এ সংবর্ধনা শেষে কবিকে মহারাজার রাজসিক অতিথি হিসেবে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে নেওয়া হয়। ওইদিনই সন্ধ্যার পর ময়মনসিংহ মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরের দিন ১৬ ফেব্র“য়ারি সকাল ৮টায় ব্রাক্ষ সমাজ মন্দিরে কবিগুরুকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে। এখানে কবি যে সুদীর্ঘ ভাষণ দেন তা শান্তিনিকেতনের পত্রে ছাপাও হয়। ১৭ ফেব্র“য়ারি কবিগুরু মুক্তাগাছা পরিদর্শন করেন। সেখানে মুক্তাগাছা সাহিত্য সংসদ ত্রয়োদশ সম্মেলনী তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়। ওইদিনই বিকেলে ময়মনসিংহ টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল নাগরিক সংবর্ধনা। স্থানীয় জনতা ও সাহিত্য সম্মেলনী কবিকে অভিনন্দন পত্র দেয়। নাগরিক মানপত্র পাঠ করেন মহারাজা শশীকান্ত চৌধুরী। সাহিত্য সম্মিলনীর পক্ষে অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন যতীন্দ্র নাথ মজুমদার। ১৮ ফেব্র“য়ারি বিকেলে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কবি গুরুর আগমনে আনন্দের প্লাবন বয়ে যায়। তাকে দেওয়া হয় অভিনন্দনপত্র। সিটিস্কুলে তার সম্মানে মহিলা সমিতি আয়োজন করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান্ ওইদিনই ময়মনসিংহ থেকে বিদায় নেন রবীন্দ্রনাথ। এরপর তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়িতে যান। ট্রেনপথে ওই যাত্রার আগে কবিকে ময়মনসিংহবাসী আবেগঘন বিদায় সম্ভাষণ জানায়। ১৫ ফেব্র“য়ারি থেকে ১৮ ফেব্র“য়ারি এ তিন দিন ময়মনসিংহের আলো-বাতাসে ছিলেন কবিগুরু। এ সময় তিনি ময়মনসিংহের সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় মন স্পর্শ করেন; জয় করেন। নিজে উপলব্ধি করেন ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক আবহ। ‘দ্রোহকাল বিলাপ’ খ্যাত উপন্যাসের লেখক ও ময়মনসিংহের তরুণ রবীন্দ্র বিশ্লেষক জুয়েল মোর্শেদ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ময়মনসিংহে যেসব অভিভাষণ প্রদান করেন পরবর্তীতে তা বিশ্বভারতী, শান্তি নিকেতনের গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।’‘মানসী, পূরবীতেও তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পত্রস্থ করেছেন। কবিগুরু কথা বলেছেন তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে। প্রশংসা করেছেন ময়মনসিংহের’ যোগ করেন এ তরুণ লেখক।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৭:৫২ ৫৭৬ বার পঠিত