মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক শক্তি: উগ্র হিন্দুত্বের পথে ভারত

Home Page » প্রথমপাতা » মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক শক্তি: উগ্র হিন্দুত্বের পথে ভারত
শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪



a73adff917825fb7b8dd2b78b9c4a71b_xl.jpgবঙ্গ-নিউজঃকেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো ব্যাপক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আরএসএস-এর মত কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপরতা শুরু করেছে। বিজেপি, শিবসেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ অন্যান্য নানা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাদের সাম্প্রতিক বিবৃতি ও কার্যকলাপে ঘোর সংশয় সৃষ্টি হয়েছে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে। ওই সব সংগঠনগুলোর ছোট বড় মাঝারি প্রায় সব নেতার মুখেই এখন কার্যত ‘হিন্দি, হিন্দু এবং হিন্দুস্তান’ প্রসঙ্গ উঠে আসছে বারবার।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন সংবিধানের অন্যতম রক্ষক হলেও তিনিও কম যাচ্ছেন না কিছুতে। তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী একটা বড় অংশ উপস্থিত ছিলেন। ‘জয়শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা তাঁর সহযোগীদের অভিনন্দিত করা হয়েছিল সেদিন। বস্তুতঃ তারপর থেকে এখন খোলাখুলি হিন্দুত্বের আবহাওয়া ছড়ানো হচ্ছে সারা দেশে।

৬৮তম স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লায় দেয়া ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনবার ‘ভারত মাতা কী জয়’ ধ্বনি দিয়েছেন। ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘বন্দে মাতারম’ ধবনিও দিয়েছেন তিনবার করে। শেষোক্ত ধ্বনি দুটি অবশ্য ডানপন্থি প্রায় সব দলগুলোই দিয়ে থাকে। কিন্তু ‘ভারত মাতা কী-জয়’ ধ্বনি সাধারণত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবত গীতা উপহার দিয়েছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে। শুধু তাই নয়, হিন্দু সন্যাসী বিবেকানন্দের বই ও উপহার দিয়েছেন তাঁকে। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো স্বামী বিবেকানন্দকে তাদের অন্যতম আদর্শ বলে মনে করে থাকে। তাঁর বিখ্যাত উক্তি ‘গর্ব করে বল আমি হিন্দু’ কে নানাভাবে উপস্থাপন করে তারা।

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে কোনো একটি দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন? না ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিদেশ সফর করেছেন? গীতা উপহার দেয়া নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে সেকথা অবশ্য নরেন্দ্র মোদি নিজেই স্বীকার বলেছেন ‘আমাদের দেশের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মানুষজন হয়ত এতে বিচলিত হতে পারেন।’

কংগ্রেস দলের মুখপাত্র রশিদ আলভি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিজেপি নেতা শেষাদ্রি চারী সাফাই দিয়ে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের লক্ষ্য করে ওই কথা বলেছেন।’

এসবের আগেই অবশ্য ‘গুজরাট ল’ সোসাইটি’ আয়োজিত এক সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ আর দেব রাখঢাক না করেই মন্তব্য করেছেন ‘স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকেই গীতা, মহাভারত পড়ানো উচিত।’ তিনি যদি একনায়ক হতেন প্রথম শ্রেণি থেকেই তা চালু করে দিতেন বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি বিজেপি সংসদ সদস্য ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা যোগী আদিত্যনাথ একের পর এক মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বক্তব্য- বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। আর এস এস এর প্রধান মোহন ভগবত হিন্দুত্ব এবং হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে প্রচার করছেন। শিবসেনা নেতা বলছেন- একথা তো আমরা অনেক আগেই বলেছি। একই প্রসঙ্গে গোয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পাররিকার, উপমুখ্যমন্ত্রী ফ্রান্সিস ডিসুজা, মন্ত্রী দীপক ধবলীকর প্রমুখ বিবৃতি দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।

বিজেপি নেতা সুব্র্যমনিয়ম স্বামী খুঁচিয়ে তুলেছেন রামমন্দির ইস্যু। দেশের সাধু সন্যাসীরাও সম্প্রতি দ্রুত রামমন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়াও বলেছেন, যে কোনো মূল্যে রাম মন্দির নির্মাণ করা হবে। স্বভাবতই ধ্বংস করা বাবরি মসজিদ চত্বরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে। কারণ ওই সব নেতাদের দাবি ‘ মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে ‘ অর্থাৎ মন্দির ওখানেই তৈরি করতে হবে।

আর এস এস নেতা মোহন ভগবত দেশজুড়ে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন। সামনের ৫ বছর নাকি তাদের অনেক কাজ বাকি।

বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন, মুখতার আব্বাস নাকভি, এম জে আকবর প্রমুখ নিজ ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দার লক্ষ্যে কথিত ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে তোলপাড় করছে বিজেপি এবং অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। বিষিয়ে তোলা হচ্ছে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সুসম্পর্ককে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোমসহ অন্য অনেক অভিযুক্তরাও এখন পাচ্ছেন জেড প্লাস অথবা জেড পর্যায়ের সুরক্ষা।

সম্প্রতি আলিগড়ের অসরোইতে ১৯ বছর আগে হিন্দু থেকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ৭১ জনকে ‘ঘর ওয়াপসী’ বা কথিত ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির মাধ্যমে ফের তদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখানকার সংশ্লিষ্ট গির্জাটি এখন রাতারাতি শিব মন্দিরে পরিণত হয়েছে।
আলিগড়ের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতা ওজমন্ড চার্লস এসব দেখেশুনে মন্তব্য করেছেন ‘এটা কী হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি হওয়ার লক্ষণ নয়? ‘

কার্যত বল্গাহীনভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে হিন্দুত্ববাদী দল এবং এদের অঙ্গসংগঠনগুলো। এতে মৌনতা অবলম্বন করে প্রকারান্তরে সায় দিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর এসব আলামতেই ক্রমশঃ স্পষ্ট হচ্ছে হিন্দুত্বের পথেই এগিয়ে চলেছে এত দিনের ধর্মনিরপেক্ষ ভারত।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০২:৫৪   ৩৮১ বার পঠিত  




প্রথমপাতা’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ