বঙ্গনিউজ: চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে গুগল। গুগলের গাড়ি ইতিমধ্যে হাইওয়েতে নিরাপদভাবে চলাচলও করেছে৷ভিডিও ক্যামেরা, রাডার সেন্সর ও লেজারের ব্যবহার এবং আশপাশের গাড়ি ও পরিবেশ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সামনে চলতে পারে গুগলের এই ‘বুদ্ধিমান’ গাড়ি।
২০১৭ সালের মধ্যে চালকবিহীন এই গাড়ি সার্বিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী হবে বলেই আশা করছে গুগল।
এর পরও সেটাকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরও কয়েক বছর লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া টেক সম্মেলনে গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন গাড়ি তৈরির এই তথ্য জানান।
সের্গেই ব্রিন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে গুগল ১০০টি প্রটোটাইপ চালকবিহীন গাড়ি তৈরি করবে, যাতে কোনো স্টিয়ারিং হুইলের দরকার হবে না। এই গাড়িতে কোনো ব্রেক বা গ্যাস পেডালও থাকবে না। গাড়িটি চালু বা বন্ধ হবে সুইচ বা বাটনের মাধ্যমে। গাড়িটি হবে দুই সিটের।
চালুর পর শুরুতে এর গতি হবে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলার জন্য এ গাড়িতে লেজার ও রাডার সেন্সরের পাশাপাশি ক্যামেরার তথ্যও ব্যবহৃত হবে।
গুগলের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি প্রকল্পের পরিচালক ক্রিস আর্মসন বলেন, ‘গাড়িটি নিয়ে আমরা রোমাঞ্চিত। এই গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত গাড়ির প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে দেবে এবং আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে সাহায্য করবে।
গাড়ি চলাচলের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে, যা আগেও পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছিল গুগল। বিশেষ নেভিগেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে চালিত গুগলের পরীক্ষামূলক গাড়িগুলো ইতিমধ্যে ৭০ হাজার মাইল রাস্তা পাড়ি দিয়েছে।
এ ছাড়া প্রয়োজনে এই গাড়ি নেভিগেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে পার্কিং এলাকাও খুঁজে নিতে পারবে। বিশেষ করে যারা অত্যন্ত বয়স্ক এবং গাড়ি চালাতে সমর্থ নন, তাদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে এ গাড়ি বেশ কাজে দেবে।’
এ গাড়ি নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও বাজারে আসতে দেরি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। মার্কিন প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, বাজারে এই চালকবিহীন গাড়ি উন্মুক্ত করার আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন বোধ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজারে আনার আগে এ সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে গুগলকে।
গুগলের এই গাড়ি উন্মুক্ত করার আগের একটি বড় বাধা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গাড়ি চালানোর নিয়মকানুন। সেখানে গাড়ির চালকের আসন ও স্টিয়ারিং হুইল থাকা বাধ্যতামূলক, যাতে গাড়ি চালানোর সময় কোনো সমস্যা হলে চালক তার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। এ নিয়ম মানতে গুগলের গাড়ির ক্ষেত্রে স্টিয়ারিং হুইল রাখতেই হচ্ছে।
প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা বলছেন, কারিগরি ত্রুটিও এ ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হতে পারে। ট্রাফিক বাতি চেনার বিষয়টি এর মধ্যে একটি। নতুন রাস্তা, নতুন বাতি-এ ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে গাড়িকে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হতে হবে।
সাধারণত গুগল ম্যাপ নেভিগেশন মেনে চলে গাড়ি। তাই যখন গুগল ম্যাপ ঠিকমতো কাজ করে, তখন গাড়ি চলতে পারে ঠিকঠাক। কিন্তু নতুন অফিস, রাস্তা বা ঠিকানায় যেতে গুগল ম্যাপ ঠিকমতো কাজ না করলে পথ চিনতে ভুল হবে।
বর্তমানে গুগলের এই গাড়ির পথ চেনার ক্ষেত্রে কিছুটা বুদ্ধিমত্তা থাকলেও তা মানুষের পর্যায়ের নয়। এ ছাড়া পার্কিং করার ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা হতে পারে।
গুগলের গাড়ির আরেকটি সমস্যা হচ্ছে-পরিবেশ পরিস্থিতি মেনে চলার ক্ষেত্রে এই গাড়ি যথেষ্ট অভিজ্ঞ নয়। এখন পর্যন্ত ভালো আবহাওয়াতেই কেবল এ গাড়ি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির পারফর্মম্যান্স দেখা হয়নি।
এ ছাড়া পথচারী চেনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হবে এই গাড়িকে।
প্রযুক্তি-গবেষকেরা বলছেন, পথ চলার ক্ষেত্রে গুগলের এই গাড়ি মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে। তবে রাস্তায় নামার আগে গাড়িকে পুরোদস্তুর প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং কারিগরি সমস্যাগুলো দূর করেই নামাতে হবে।
সূত্র: পিসি টেক ম্যাগাজিন
বাংলাদেশ সময়: ০:২৪:১৪ ৪৮৫ বার পঠিত