বঙ্গ-নিউজঃ বঙ্গের সুপ্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০ বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল থেকে আবার ক্লাস শুরু হল। ৪১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় গোটা এশিয়াতেই এককালে ছিল সবচেয়ে সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান -কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।ভারতীয় পার্লামেন্ট ২০১০ সালে একটি বিল পাস করে সেই নালন্দাকেই আবার পুনরুজ্জীবিত করেছে -প্রতিষ্ঠানের আচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। জনাপনেরো ছাত্রছাত্রী আর এগারোজন শিক্ষককে নিয়েই যাত্রা শুরু করল সেই নতুন নালন্দা।
নালন্দার পুনর্জন্ম যেভাবে
বিহারের রাজধানী থেকে প্রায় নব্বই কিলোমিটার দূরে নালন্দার প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ।
দ্বাদশ শতাব্দীতে তুর্কী সেনাবাহিনীর হাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে এই নালন্দা ছিল এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে বিখ্যাত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র -সুদূর চীন, জাপান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া থেকেও ছাত্ররা এখানে পড়তে আসতেন।
বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি, আর ইতালির বোলোনিয়াতে যখন ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, নালন্দার বয়স তখনই সাড়ে ছশো বছর।
কিন্তু গত আটশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নালন্দা ছিল শুধুই এক খন্ডহর। ২০০৬ সালে নালন্দাকে আবার পুনর্জন্ম দেওয়ার প্রস্তাব দেন ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম।
তার বছরচারেক বাদে ভারতীয় পার্লামেন্টে পাস হয় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিল -যাতে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল নতুন আকারে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তাতে পড়ানো হবে ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, পররাষ্ট্রনীতি, পরিবেশবিদ্যা বা বৌদ্ধ দর্শনের মতো নির্বাচিত কয়েকটি বিষয়।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যাতে প্রথম থেকেই একটি জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য দেশ-বিদেশের পন্ডিতদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘নালন্দা মেন্টর গ্রুপ’ -যার নেতৃত্বে ছিলেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
নালন্দার পুনর্জন্ম কেন জরুরি, তা ব্যাখ্যা করে প্রফেসর সেন বলছিলেন ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এশিয়াব্যাপী একটা অঙ্গীকারের পরিচয় -ভারতের সঙ্গে চীন-জাপান-কোরিয়া ও অন্যদের সহযোগিতার দ্যোতক।
বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর অমর্ত্য সেন এখন তার আচার্যের পদে আসীন। তবে ইতিমধ্যেই শত শত কোটি টাকা খরচ হলেও নালন্দা এখনও পুরোদস্তুর ক্যাম্পাস পায়নি -ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছুটা দূরে রাজগীরের এক কনভেনশন সেন্টারেই ক্লাস শুরু হচ্ছে। সারা বিশ্ব থেকে হাজারেরও বেশি আবেদন পড়লেও কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত মাত্র পনেরোজন শিক্ষার্থী আর জনাদশেক শিক্ষককেই বেছে নিতে পেরেছে।
তবে প্রথম দিনে এর মধ্যে সমস্যার কিছু দেখছেন না নালন্দার নতুন উপাচার্য গোপা সাবরওয়াল। তিনি বলছিলেন, ‘আসলে একটা শিক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ধরনটাই আলাদা হয়। প্রথম ধরনের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে, তাদের প্রধান কাজ হল পড়ানো ও মান যাচাই করা, পরীক্ষা নেওয়া। কিন্তু নালন্দা একটা গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটাই সম্পূর্ণ আলাদা।’
নালন্দার নতুন ছাত্রছাত্রীরা আপাতত একটি হোটেল থেকেই ক্লাস করছেন -তাদের নতুন হোস্টেলও তৈরি হয়নি। আর আপাতত চালু হয়েছে শুধু ইতিহাস ও পরিবেশবিদ্যা শাখারই ক্লাস। তবে ছোটখাটো এমন অসংখ্য সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শত শত বছর বাদে একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে আবার চালু করা যাচ্ছে, সেটাকেই বিরাট অর্জন হিসেবে দেখছেন নালন্দার পরিচালকরা। সূত্র : বিবিসি।
বাংলাদেশ সময়: ১:৪৩:১০ ৪২৬ বার পঠিত