হাসান মাহমুদ,বঙ্গনিউজ-ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় বিশ্লেষণ করে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, বঙ্গোপসাগরে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের বাইরে ভারতের কর্তৃত্ব এই রায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটা স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিকোণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিতর্কিত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি রায়ে ভারতের দিকে পড়লেও তার আলাদা কোনও তাৎপর্য নেই বলেই তারা মনে করছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমার নকশাসমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চার দশকের পুরনো বিবাদের নিষ্পত্তি করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল তাদের রায় দিয়েছে গত মাসের গোড়ার দিকে। সাগরে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন বা ইইজেড-এর যে অংশটা নিয়ে বিরোধ ছিল, তার বেশিটা বাংলাদেশের দিকে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রায় খুঁটিয়ে পড়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার বাইরে সাগরের বড় অংশে এই রায় ভারতের পক্ষেই গেছে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার মেরিন শাখায় সাবেক ডিজি বিজন কুমার সাহা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিবিসিকে বলছিলেন, ”সমুদ্রসীমার রেখাটা যেহেতু ১৭৭ ডিগ্রি ৩০ মিনিট বরাবর সোজা টানা হয়েছে - কোনও ডানদিক বাঁদিক করা হয়নি - তাই ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ইইজেডে বাংলাদেশ তাদের দাবির অনেকটাই পেয়েছে, তবে তার বাইরে কিন্তু তারা বিশেষ কিছুই পায়নি।”
”ইইজেডে-র বাইরে এই অংশটায় বাংলাদেশ চেয়েছিল সীমারেখাটা টানা হোক আরও পশ্চিম ঘেঁষে, ২১৪ ডিগ্রিতে, কিন্তু তা হয়নি। তা ছাড়া দক্ষিণে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ আর পূর্বে মিয়ানমার থাকায় ইইজেডে-র বাইরে বাংলাদেশের এলাকা খুবই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে, অন্যদিকে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে,” বলছিলেন মি. সাহা।
অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের বেশির ভাগ অংশে ভারতের কর্তৃত্ব এই রায়ে নিশ্চিত হয়েছে, তাই স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিতেও এই রায়ে ভারত খুশি। তবে হাড়িয়াভাঙা নদীর মোহনার কাছে দক্ষিণ তালপট্টি তথা নিউ মুর আইল্যান্ড দ্বীপটি ভারতের দিকে পড়লেও সমুদ্রসম্পদের দিক থেকে একে আলাদা গুরুত্ব নারাজ দিতে বিশেষজ্ঞরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড: সুগত হাজরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের উত্তরভাগে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কারণ সেখানে উপকূলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য আছে। তবে সেটা আছে সীমান্তের দুদিকেই, ফলে ভারত-বাংলাদেশ দুদেশই তাতে লাভবান হতে পারে, যদিও এখনও পর্যন্ত ওই অঞ্চলে অনুসন্ধান খুব কমই হয়েছে।
শুধু হাইড্রোকার্বনই নয়, সীমানা নির্ধারণের পর ইলিশ-পমফ্রেট-সার্ডিনের মতো দামী মাছ আহরণের সুযোগও বাড়বে দুদেশেরই। তবে তালপট্টি কোন দিকে গেল তাতে খুব একটা কিছু আসবে-যাবে না বলেই তাদের ধারণা।
সার্বিকভাবে এই রায় প্রতিবেশীসুলভ সৌহার্দ্যেরই দৃষ্টান্ত, সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, ”দুপক্ষই ট্রাইব্যুনালে গেছে, তাদের রায় মেনে নিয়েছে এবং এখন দুদেশই চেষ্টা করছে এই রায়ের ভিত্তিতে কীভাবে সহযোগিতার নতুন নতুন পথ খোলা যায়। ফলে এই রায়কে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের আলোতেই দেখছি - সাদা-কালোয় বিচার করছি না।”
জেতাহারায় না-গেলেও ভারত মনে করছে, এই রায়ে তাদের কোনও লোকসান তো হয়ইনি - বরং লাভই হয়েছে। কারণ এতদিন থমকে থাকার পর এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে নানা কর্মকান্ড যেমন এবার শুরু করা যাবে, তেমনি তার বাইরেও বঙ্গোপসাগরে ভারত জানান দিতে পারবে তাদের স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতি।
বাংলাদেশ সময়: ২:০৪:৪৭ ৪০০ বার পঠিত