হাসান মাহমুদ,বঙ্গনিউজ-রাজধানীর মগবাজারে এক বাড়িতে ঢুকে গুলি চালিয়ে এক নারীসহ তিনজনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।পূর্ব রাজাবাজারে ইসলামী ফ্রন্ট নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে মগবাজারের সোনালীবাগে এই হত্যাকাণ্ড ঘটল।নিহতরা হলেন- বৃষ্টি ওরফে রানু (৩০), তার বাড়ির ভাড়াটে মুন্না (২২) ও বেলাল (২০)।আহত হয়েছেন বৃষ্টির ভাই হৃদয় (১৮)।
রেলের জমি দখল নিয়ে বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, চাঁদা না দেয়ায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
বৃষ্টি মগবাজার রেলওয়ে ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালা চানের বড় বোন।
এলাকাবাসী জানায়, কালাচানের দখল করা জমিতে টিনশেড ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছিলেন বৃষ্টি। স্থানীয় সন্ত্রাসী কালা বাবু তার দখল নিতে এই হামলা চালায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আবদুল খালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলের জমির দখল নিয়ে কালা চান ও কালা বাবুর মধ্যে ঝামেলা ছিল।
“কালা বাবু তাই দলবল নিয়ে এসে কালা চানের বোন বৃষ্টিকে গুলি করেছে। এসময় তার ছোটভাই হৃদয়ও গুলিবিদ্ধ হয়।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেক হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক রানু, মুন্না ও বেলালকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী সোনালীবাগের চান বেকারির গলির ওই বাসায় ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার বাড়িগুলোতে ঢুকতে হয় সরু গলি দিয়ে। অধিকাংশ বাড়ির জানালার কাচ ভাঙা। শিশুরা বাড়ির ভেতর থেকে বের হতে চাইছে না। নারী-পুরুষদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
নিহত বৃষ্টির চাচা শাহ আলম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, এক মাস আগে থেকে কালা বাবু নামে এক সন্ত্রাসী দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেয়ায় কালা বাবু সদলবলে এসে গুলি চালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেলের ওই জায়গায় ছয়টি টিনশেড ঘর রয়েছে, যার অধিকাংশই ভাড়াটেরা থাকেন।
দুটি রুমের ভাড়াটে মাহমুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ৭ হাজার টাকা ভাড়া দেন। প্রতিটি ঘর থেকে কালাচানের হয়ে বৃষ্টি ভাড়া তুলতেন।
বৃষ্টির ভগ্নিপতি আবদুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাত মাস আগে ৭৫ হাজার টাকায় রনি নামের একজনের থেকে রেলের জমিটার দখল বুঝে নেয় কালা চান।
“পরে রনির ভাতিজা কালা বাবু দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কালাচানের কাছে। এটি নিয়ে তাদের ঝামেলা চলছিল।”
ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়িই কালা বাবুর বিভিন্ন আত্নীয়ের। তবে কালা বাবু নিজে এলাকায় থাকেন না।
হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সোনালীবাগে যান।
পরপর দুদিন দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এসব ঘটনায় মোটেও বলা যাবে না রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি আমরা।”
ঘটনাটি নিয়ে সাংবাদিকদের ‘অপপ্রচার’ না চালাতেও অনুরোধ করেন তিনি।
আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল, শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান, উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ও ঘটনাস্থলে যান।
পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপরতা দিয়ে অপরাধীদের ধরতে সচেষ্ট বলে দাবি করেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৩:৫১ ৭২২ বার পঠিত