বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা আসছেন মায়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান্ট কিয়াওয়ের।
আগামী রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করতেই আসছেন তিনি।
তবে শুধু বৈঠকে অংশ নেওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না তার সফর। বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন জেলা সিলেট ঘুরে দেখবেন তিনি। আর এজন্য দুদিন আগেই সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছাবেন পররাষ্ট্র সচিব পদমর্যাদার ইউ থান্ট কিয়াওয়ের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য জানায়।
দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে সীমান্ত ও রোহিঙ্গাসহ নানা ইস্যু আলোচনা হবে এ বৈঠকে।
এছাড়া দুদেশের মধ্যে নিয়মিত নিরাপত্তা বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। আলোচনা হবে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের বাংলাদেশ সফর নিয়েও।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান্ট কিয়াওয়ের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। শুক্রবার দুপুরে তারা সিলেটের তামাবিল, জাফলং ও চা বাগানসসহ দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন।
কয়েকটি সীমান্ত এলাকাও পরিদর্শন করবেন তারা। আগামী শনিবার রাতে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় ফিরে রোববারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।
এদিন দুপুর দেড়টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে ইউ থান্ট কিয়াওয়ের বৈঠকের কথা রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়বেন তারা।
ঢাকা সফরকালে মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
রোববারের বৈঠকে রোহিঙ্গা ও সীমান্ত ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে অনাস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়টি এ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। এছাড়া বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ২০১১ সালে সই হওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশন কার্যকর করা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশেষ কমিটি গঠনের ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ।
এবারের বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক। তিনি ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
গত ১৮ জুন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুন মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সীমান্তে মায়ানমারের গুলিবর্ষণে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সৈনিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার কারণে বৈঠকে যোগ দিতে আসেনি মায়ানমার।
জানা যায়, মায়ানমারের সঙ্গে এবারের নিয়মিত নিরাপত্তা বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, আঞ্চলিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, উপকূল দিয়ে জাহাজ চলাচল চুক্তি, সম্পূরক সীমানা প্রটোকল অনুসমর্থনসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও স্থান পাবে।
নিয়মিত নিরাপত্তা বৈঠক বিষয়ে বাংলাদেশ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এর একটি খসড়া প্রস্তাব মায়ানমারকে পাঠিয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা ইস্যুতে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বা কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিবিএমপি) নিয়েও আলোচনা করা হবে। এটি মূলত দুই দেশের সীমান্ত ইস্যুগুলো নিয়ে একটি গাইডলাইন।
এর মধ্যে সীমান্ত দিয়ে মাদক, নারী বা অস্ত্র পাচারসহ যাবতীয় অবৈধ কাজ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের বিষয়গুলো সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, অসুরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিতকরণ, সমন্বিত পেট্রোলিং এবং গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।
দেশটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অষ্টম বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালক আসুদ আহমেদ বঙ্গনিউজকে বলেন, ৩১ আগস্ট শেষের দু’দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবারেই মায়ানমারের প্রতিনিধি দলটি ঢাকা পৌঁছাবে।
এবারের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানসহ দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই আলোচনা হবে। এমনকি আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টিও উঠে আসবে বলে জানান তিনি।
এর আগে ২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সপ্তম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় মায়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে। সপ্তম বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৩:৩৭ ৪০৩ বার পঠিত