পুলিশকে হুমকি দেয়া বা নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগের তদন্তের পর কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ‘ভিত্তি’ খুঁজে না পেলেও এই বিষয়ে মামলা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।তবে এই মামলার ভার দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদকে, যিনি ইসির একজন উপসচিব। তবে এটা স্পষ্ট, তিনি মামলা না করলেও ইসি আর এই বিষয়টি নিয়ে এগোবে না।
গত ২৬ জুন ওই উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। শামীমের বড় ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে শূন্য ওই আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন মেজ ভাই সেলিম ওসমান।
ভোটের দিন কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে টেলিফোনে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তোলেন শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। এরপর তা তদন্তের উদ্যোগ নেয়া নেয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদন গত সপ্তাহে ইসির সভায় পর্যালোচনা করা হয়।
এরপর সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি কাকেও দোষী করে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলেনি। কমিটির কাছে পুলিশ লিখিত কোনো অভিযোগও করেনি। তাই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনে বাধা দিলে কিংবা দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে মামলা করার কথা আইনে বলা হয়েছে। আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিই। তা বাস্তবায়ন করবে ইসি সচিবালয়। আইন শাখা এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যবস্থা নেবে।”
ইসির আইন শাখার কর্মকর্তার জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ভোট কেন্দ্র বা ভোট কক্ষ দখল করার বিষয়ে সহায়তা বা পরোক্ষ সমর্থন বা সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কর্মরত কর্মকর্তা বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যেতে পারে।
শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ না দিলেও সে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।ফৌজদারি মামলা করা যেতে পারে বলে আইন শাখা মতামত দিয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ইসির যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শাহজাহান।
কারো বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর মামলার বিষয়টা ছেড়ে দিয়েছি।”
ইসির আইন শাখার এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। যেহেতু গেজেট হয়ে গেছে, এখন আর কিছু করার নেই। এখন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা আদালতে যেতে পারেন।
কমিশনের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন বলে জানান ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার এক উপসচিব।
তবে কমিশন থেকে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাননি রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ না দিয়ে মামলার ভার রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ঢাকা বিভাগীয় এ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে কারণে ইসি ব্যবস্থা নিতে পারেনি, সেই একই কারণে প্রমাণ ছাড়া আদালতেরও মামলা নেয়ার সম্ভাবনা কম।
“রিটার্নিং কর্মকর্তার দিকে ঠেলে দিয়ে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্য দিয়ে কার্যত শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটাল,” বলেন এক কর্মকর্তা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা শামীমের বিরুদ্ধে ভোটের দিন অভিযোগ তুলেছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার বশির উদ্দিন। গণমাধ্যমে তিনি এই অভিযোগ তোলার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
এএসপি বশির কোনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ হাবিবা মণ্ডল নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী তদন্ত কমিটি স্বউদ্যোগে বিষয়টি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে ইসি সচিবের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলেও অভিযুক্তদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।
এ প্রতিবেদনকে ‘অসম্পূর্ণ’ অভিহিত করলেও নতুন করে আর কোনো তদন্ত চালায়নি নির্বাচন কমিশন। ওই প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেই পদক্ষেপ নেয়ার ভার এখন রিটার্নিং কর্মকর্তার দিকে ঠেলে দিল ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ১:১৫:২৭ ৪০৯ বার পঠিত