বঙ্গ-নিউজঃ পদ্মার প্রবল স্রোতে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষার দুই প্রধান পথ মাওয়া ও পাটুরিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়েছে।প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে চার ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজার যানবাহন এদিকে দীর্ঘ জট সৃষ্টি হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বাস ও ট্রাক চালকদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিআইডব্লিউটিসি বলেছে, রোববার সকাল থেকে আবার স্বাভাবিক যানবাহন পারাপার শুরু হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে দেড়শর বেশি যাত্রীবাহী বাস এবং পাঁচশর কাছাকাছি ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।
“স্বাভাবিকভাবে আধ ঘণ্টা সময় লাগলেও স্রোতের কারণে এখন ফেরি পার হতে দেড় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।”
বিআইডব্লিউটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, “মাওয়া ঘাটে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর সেদিক দিয়ে ফেরি চলাচল কমে গেছে। এ কারণেও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।”
দৌলতদিয়া ঘাটেও একই অবস্থা বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় দৌলতদিয়া ঘাটে পাঁচশর বেশি বাস ও ট্রাক নদী পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।
বিআইডব্লিটিসির কর্মকর্তারা জানান, এই নৌপথের ১৬টি ফেরির মধ্যে ১৩টি চলছে। ১০দিন ধরে বিকল হয়ে রয়েছে ফেরি কাবেরী। হামিদুর রহমান ও রজনীগন্ধা নামের দুটি ফেরি পাটুরিয়ার মধুমতি মেরামত কারখানায় রয়েছে।
এদিকে স্রোতের কারণে রাজবাড়ী থেকে নৌপথে পাবনার সঙ্গে যোগাযোগও প্রায় বিচ্ছিন্ন। জৌকুলা-নাজিরগঞ্জ পথেও ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
মাওয়া-কাওড়াকান্দি
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের বিকল্প হিসেবে বিআইডব্লিটিসি মাওয়া-কাওড়াকান্দি ঘাট ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও যানজট সেখানেও কম নয়।
মাওয়ায় রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় চারশ গাড়ি আটকে ছিল বলে বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আসিফুজ্জামান জানান।
তিনি বলেন, “এমনিতে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগছে বলে এই যানজট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে মাত্র চারটি ফেরি চলাচল করছে।”
ঘাট কর্মকর্তারা জানান, একটি পন্টুন কম থাকায় এবং প্রবল স্রোতের কারণে কাওড়াকান্দির পথে রামশ্রী, কর্ণফুলী, ঢাকা ও থোবাল ফেরি শুক্রবার সারাদিন চলেনি।
“দিনে যেসব ফেরি ৯ থেকে ১০ বার যানবাহন পারাপার করত সেগুলো এখন স্রোতের কারণে চার থেকে পাঁচবার যাতায়াত করতে পারছে। আর যে ফেরিগুলো চারবার যাতায়াত করত, সেগুলো এখন পার হচ্ছে মাত্র একবার।”
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সারাদিনই মাওয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। ঘাটের চৌরাস্তা থেকে ট্রাকের লাইন দুই কিলোমিটার দূরে শ্রীনগরে উপজেলার দোগাছি ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মাওয়ার ৩ নম্বর রো রো ফেরি ঘাট পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানীর নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১১ ঘণ্টা পর বুধবার সীমিত আকারে সেটি আবার চালু করা হয়।
মাওয়ার ২ নম্বর ঘাটে রো রো ফেরি ঘাট স্থানান্তর করে ৪৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চালু হয় রো রো ফেরি পারাপার। স্রোত আর নদী ভাঙ্গনের কারণে ৩ নম্বর ঘাটটি এখনো সচল করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে।
মাওয়ার উল্টো দিকে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাটেও অপেক্ষায় রয়েছে কয়েকশ যানবাহন।
বিআইডব্লিটিসির ট্রান্সপোর্ট সুপার নুরুল আমিন রাত ১১টায় বলেন, “দুর্ঘটনা এড়াতে সাধারণ ফেরি চলাচল রাতে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সময়ে কেবল তিনটি রো রো ফেরি চলবে। আর ফেরি কম থাকায় কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে দুই কিলোমিটার পথে যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়েছে।”
সকাল নাগাদ গাড়ির জট আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৯:৪৭ ৩৭৯ বার পঠিত