বঙ্গ-নিউজঃ মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা সীমিত। তাই ভর্তি পরীক্ষায় ফলের চেয়ে মেধাই হবে আসল যোগ্যতা। প্রতিযোগিতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হারিয়ে যাবে অনেক জিপিএ-৫-প্রাপ্ত শিক্ষার্থী। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পছন্দের প্রতিষ্ঠান বুয়েট, মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। পাসের হার ও জিপিএ-৫-প্রাপ্তির তুলনায় এসব প্রতিষ্ঠানের ভর্তির সুযোগ পাওয়া মানেই সোনার হরিণ। এদিকে এ বছর থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ক্যালকুলেটর ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮ হাজার আসন রয়েছে। আর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে রয়েছে ৮ হাজার ৩৫০ আসন।
পছন্দের শীর্ষে থাকা ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২১ হাজার আসন রয়েছে। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ার সুযোগ অতিরিক্ত সেশন ফি আর সেমিস্টার ফির কারণে মধ্যবিত্ত বা নিু মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের নাগালের বাইরে। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ হলে ভর্তিতে গুনতে হবে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এর বাইরেও রয়েছে অন্যান্য খরচ। এ ছাড়া উন্মুক্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ লাখ ৪২ হাজার আসন রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৯৯টি কলেজে স্নাতকে (সম্মান) ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫টি এবং ১ হাজার ৪৭৪টি কলেজে পাস কোর্সে প্রায় আড়াই লাখ, কলেজ অব লেদার টেকনোলজি ও কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজিতে ৪৫৫টি, ১৬টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে ১ হাজার ৬৫টি আসন রয়েছে। তবে ভর্তির জন্য মূল যুদ্ধটা হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর মেডিকেল কলেজের ৪৬ হাজার আসনের বিপরীতেই। ১০ শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৭০ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আট বোর্ডে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৭ জন।
মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সংগীত শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৩৮ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৫ হাজার ৯৪৪ জন। পাস করেছেন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭০ জন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সবাই তো চাইলেই বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার বা ভালো বিষয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। এখন প্রতিযোগিতার বাজার। যে যোগ্য সে-ই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভালো জায়গায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। তবে আমাদের দেশে নানা ধরনের উচ্চশিক্ষা রয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য কেউ যে একেবারে ভর্তি হতে পারবে না তা কিন্তু নয়। কলেজগুলোয় হাজার হাজার আসন খালি থাকে। শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। এসব নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এদিকে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট মিলে ৭০ হাজারের কিছু বেশি আসন রয়েছে।
এর জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৭ লাখ শিক্ষার্থী। অন্তত লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তিবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমিত আসন, অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আস্থাহীনতা, চড়া টিউশন ফি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কম আকর্ষণই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।ইতিমধ্যে ১৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৮৫টি মেডিকেল ও ১৯টি ডেন্টাল কলেজের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৪ আগস্ট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে এবং ১৮ আগস্ট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়াও এ মাসে শুরু হচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাধারণত পছন্দের শীর্ষে থাকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৯ হলেও এর মধ্যে নর্থসাউথ, ইস্টওয়েস্ট, ব্র্যাক, আহছানউল্লাহ, ইনডিপেনডেন্ট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনালসহ হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের বেশি আকৃষ্ট করে। যদিও এগুলোর ব্যয় সাধারণের নাগালের বাইরে। এর বাইরে বুয়েট এবং বাংলাদেশ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের শীর্ষে থাকে। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবারই পিছিয়ে থাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এবারও তারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ জানান, এবার তারা আগেভাগেই কার্যক্রম শুরুর চিন্তাভাবনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেওয়ার জন্য প্রতি বছর কয়েকবার সভা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফলপ্রসূ হয় না। তবে এবারে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো সভাও করা হয়নি। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষার্থীদের সময়, শ্রম, ভোগান্তি ও অর্থ অপচয় হ্রাস পেত।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৮:০৫ ৪৪৮ বার পঠিত