কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ পাসপোর্ট আবেদন ও সংগ্রহের সময় জনগণের ভোগান্তি এড়াতে ২০১২ সালে এসএমএস সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। পাসপোর্ট আবেদনপত্র জমা দেবার পর এর অগ্রগতি এবং পাসপোর্ট গ্রহণের তারিখ জানা যেতো এই এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে।
তবে কয়েকমাস ধরে সার্ভিসটি নিষ্ক্রিয় হওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে আবেদনকারীদের। তাই জনসেবার পরিবর্তে আরও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আবেদনকারীরা।বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী কামরুজ্জামান জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সস্ত্রিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ডেলিভারি স্লিপে ৮ জুলাই পাসপোর্ট সংগ্রহের দিন উল্লেখ করা হলেও নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট মেলেনি তার ভাগ্যে।
পাসপোর্টের অগ্রগতি জানার জন্য যতবার ৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস করেছেন ততবারই ‘প্রিন্টিং অব ইওর পাসপোর্ট ইজ ইন প্রোগ্রেস’ বার্তাটি এসেছে। বার্তায় ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে আগারগাঁও যাবার কথা বললেও সেখানে গিয়ে জানা গেল পাসপোর্ট হয়নি।
অবশেষে ৪ আগস্ট তিনি পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। তবে ডেলিভারির দিনও তার মোবাইলে ‘প্রিন্টিং ইন প্রোগ্রেস’ একই বার্তা আসে।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাসপোর্টের অবস্থা যাই থাকুক না কেন, দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে অধিদপ্তরের এসএমএসএ ‘প্রিন্টিং ইন প্রোগ্রেস’ বার্তাটি চলে আসে।
প্রতিবেদকের পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ৭ আগস্ট হলেও ১৩ আগস্ট তার মোবাইলেও একই বার্তা পাঠানো হয় অধিদফতর থেকে।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের জন্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে ৯১২৩৬৮৮ নম্বরটি দেয়া থাকলেও নেই কোন অপারেটর। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আগস্ট মাসে ১০ টি কল করা হলেও একটি কলও ধরে নি অধিদফতর। পাসপোর্ট অফিসের একমাত্র ই-মেইল ঠিকানায় (inquiry@passport.gov.bd) এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে তথ্য জানতে চেয়ে ইমেল করা হলেও ৬ মাসেও কোন সাড়া মেলেনি। অনলাইনে ফর্ম পুরণের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি অধিদফতর থেকে।
অধিদফতর থেকে বিভান্তিকর এসএমএস বার্তা পাঠানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, মাঝে মাঝে সার্ভার ডাউন থাকার কারণে একইবার্তা বার বার পাঠানোর সমস্যাটি দেখা যায়।
বিভ্রান্তিকর এসএমএসের পাশাপাশি প্রতিটি পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে ডেলিভারি স্লিপে উল্লেখিত তারিখে অনুসরণে ব্যর্থ হচ্ছে অধিদফতর।
অধিদফতরের বিধান অনুযায়ী, ৫ হাজার টাকায় জরুরি পাসপোর্ট ৭ কার্যদিবস এবং ৩ হাজার টাকায় সাধারণ পাসপোর্ট ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার কথা। তবে উভয় ধরনের পাসপোর্ট ডেলিভারির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪ থেকে ১০ দিন দেরিতে ডেলিভারি দেয়ার প্রমাণ রয়েছে বাংলানিউজের কাছে।
কেন এত বিলম্ব এমন প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের কর্মকর্তারা ‘কাউন্টারে পাসপোর্ট আসে নি’ ছাড়া অন্য কোন তথ্য জানে না।
আগারগাঁয়ে পাসপোর্ট নিতে আসা তাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৭ দিনের মধ্যে জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য ৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। ৭ম কার্যদিবসে পাসপোর্ট নিতে গেলে তার পাসপোর্ট ‘কারণ জানি না, কাউন্টারে আসে নি’, বলে জানায় একজন সেনা কর্মকর্তা।
বিলম্বে পাসপোর্ট প্রদানের অন্যতম কারণ হিসেবে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টের উপর নির্ভরযোগ্যতার কথা বললেন মো. সিরাজ উদ্দিন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে পজিটিভ রিপোর্ট পেলেই আমরা পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের কাজ শুরু করি। পাসপোর্ট পেতে দেরি হলে বুঝতে হবে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পেতে দেরি হয়েছে।
তবে মাঝে মাঝে পাসপোর্টের অতিরিক্ত চাপ ও প্রিন্টিং মেশিনে সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে বলে স্বীকার করেন তিনি।
অনলাইনে ফি জমায় কারিগরি ত্রুটি
এসএমএস সার্ভিসের পাশাপাশি অনলাইনে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ায়ও ত্রুটি দেখা দিয়েছে। অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম পূরণ করে অনলাইনে টাকা জমা দেয়া হলে ফর্মের রিসিপ্ট নম্বরস্থলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিপ্ট নম্বরটি মুদ্রণের কথা থাকলেও, প্রায় ক্ষেত্রেই রিসিপ্ট নম্বরের ঘরটি খালি দেখায়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি হওয়ায় ঘরটিতে কোন নম্বর এন্ট্রি করানো যায় না। এতে অনলাইনে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা জমা দিয়ে দ্বিধা-দন্দ্বে পড়তে হচ্ছে আবেদনকারীদের।
অনেকে অনলাইনে টাকা জমা দিয়েছেন তবে ফর্মে রিসিপ্ট নম্বর ছাপা হয়নি বলে নন-অনলাইন পদ্ধতিতে টাকা পরিশোধের ঘরে গিয়ে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে ফর্মে রিসিপ্ট নম্বর বসাচ্ছেন যা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ।
এই ত্রুটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিদফতরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, যেকোন পদক্ষেপ নিলে প্রথমে একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনলাইনে টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিছু কারিগরি ত্রুটি থাকলেও আশা করছি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্রুটিগুলো সমাধান হবে।
এদিকে পাসপোর্ট ফি এর সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১২৫ টাকা চার্জ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিস কাউকে অতিরিক্ত টাকা নিতে বলেনি এবং টাকা নেবেও না। এটা ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে আদায় করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০২:৪০ ৩৯৬ বার পঠিত