বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ (খোকন): বাড্ডায় তোবা কারখানায় অনশনরতদের পুলিশ পিটিয়ে তুলে দেয়ার পর বিজিএমইএ ভবনে শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন দিয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তারা।
তোবার শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে এই ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। দুই মন্ত্রীই বলেন, পাওনা পরিশোধের কারণে এখন আর শ্রমিকদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিক নিহতের মামলায় তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার বন্দি থাকার মধ্যে পাঁচটি কারখানায় তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়ে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঈদের আগের দিন গত ২৮ জুলাই অনশনে বসে শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের কর্মসূচি শুরুর পর পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ তোবাকর্মীদের দুই মাসের বেতনের বন্দোবস্তু করে। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিকরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
দেড় হাজার শ্রমিকের মধ্যে বুধবার সাড়ে পাঁচশ’ শ্রমিক বিজিএমইএ কার্যালয়ে এসে বেতন নিয়ে গেলেও অধিকাংশেই বাড্ডায় কারখানা ভবনে অনশনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ তাদের পিটিয়ে তুলে দিলে ভিড় বাড়ে বিজিএমইএ ভবনে।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৬টা পর্যন্ত তোবা গ্রুপের ১ হাজার ৩১৫ জন বেতন নেন বলে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ নেতারা জানান।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) মালিক দেলোয়ারকে নিয়ে বসেছিলাম। সে এখন ব্যাংকে আছে। আমরা কড়া গলায় তাকে জানিয়ে দিয়েছি, প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হবে।
“মালিক টাকা না দিলে আমরা (শাজাহান খান ও মুজিবুল হক চুন্নু) মন্ত্রী হয়েও শ্রমিকদের সঙ্গে রাজপথে আন্দোলনে নামব। শ্রমিকদের দাবি আদায়ে সরকারের যা যা করা দরকার, করা হবে।”
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আমরা দেলোয়ারকে বলেছি, তুমি রোববার বেতন দিবা। কিভাবে দিবা জানি না। প্রয়োজনে টাকা বানিয়ে হলেও বেতন দিবা।”
এই আন্দোলনের মধ্যেই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দুদিন আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন দেলোয়ার। জামিন পেতে তিনি শ্রমিকদের বেতন দেয়ার অঙ্গীকার করেন বলে আদালতের আদেশে দেখা যায়।
দেলোয়ারকে মুক্ত করার জন্যই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখেছিল বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।বিজিএমইএ নেতারাও বলছিলেন, দেলোয়ার মুক্ত থাকলে হয়ত বেতন নিয়ে এই জটিলতা হত না।
শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করলে দেলোয়ারকে সরকার ছাড় দেবে না জানিয়ে চুন্নু বলেন, “১০ তারিখের মধ্যে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বেতন দিতে বাধ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ নেব। তাকে বেতন দিতে হবে, দিতে হবে।”
তোবার শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা অবস্থাকে ‘ভিন্ন খাতে প্রবাহিত’ করার চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করেছেন শাজাহান খান, যিনি নিজে পরিবহন খাতের শ্রমিক নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “শ্রমিক আন্দোলন মানেই শক্তি প্রদর্শন নয়, মারামারি ফাটাফাটি নয়। সরকারের গোয়েন্দা বিভাগে তথ্য রয়েছে, শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে পুরো পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা ছিল।
“যারা অনশন করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আন্দোলন মানে হঠকারিতা নয়। এভাবে আন্দোলন হয় না। কারখানা ধ্বংস করে দাবি আদায়ে কোনো স্বার্থকতা নেই।”
তোবার শ্রমিকরা অনশনে বসার পর বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তাদের সঙ্গে সংহতি জানায়। এদের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশুও ছিলেন। তার নেতৃত্বে ‘তোবা গ্রুপ সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার অনশনরতদের তুলে দেয়ার সময় পুলিশ মোশরেফা মিশু এবং ট্রেড ইউনিয়ন্ নেতা জলি তালুকদারকে আটক করে। আটকের আগে শিশু সারাদেশে পোশাক কারখানায় ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করে যান।
বিজিএমইএ নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, তোবা গ্রুপের এই শ্রমিকদের নিয়ে বামপন্থি দলগুলো ‘রাজনীতি’ করে আসছে।
শাজহান খান দল ও মত ভুলে সব শ্রমিক সংগঠনকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শ্রমিকদের কোনো দল নেই। ডান-বাম খুঁজে শ্রমিকদের ক্ষতি করে কোনো লাভ নেই।”
শ্রম প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, “শ্রমিকরা পাওনা আদায়ে আন্দোলন করছিল, এখন তো তা দেয়া হচ্ছে, তাহলে এখনো কর্মসূচি কেন? এখন তো কোনো কর্মসূচির প্রয়োজন নেই।”
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “অহেতুক এমন কোনো কর্মসূচি দেবেন না, যাতে শ্রমিকরা অসুবিধায় পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:২১ ৩৭২ বার পঠিত