নয়া দিল্লি: সমস্ত চাপ কাটিয়ে সোমবার নরেন্দ্র মোদি সরকার রাজ্যসভায় জানিয়ে দিল, গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনা হবে না। প্রতিবাদে কক্ষত্যাগ করেন কংগ্রেস এবং বাম-সহ বিরোধী সাংসদেরা। বিষয়টি নিয়ে গত এক সপ্তাহ রাজ্যসভায় জলঘোলার পর সোমবার ইতি পড়েছে গাজা বিতর্কের।গাজায় ইসরাইলের অভিযানের বিরুদ্ধে সরব কংগ্রেস, বাম-সহ বিভিন্ন বিরোধী পক্ষ। রাজ্যসভায় এ নিয়ে বিতর্কের জন্য কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছিল ওই দলগুলি। প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজ্যসভায় গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কে সায় দেয় কেন্দ্র।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “প্যালেস্তাইনের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি আমরা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবো। আগের সরকারও এই বিদেশনীতি নিয়েই চলেছে।” এই বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আনার দাবিটিও কার্যত উড়িয়ে দেন তিনি।
সুষমা জানান, যে সংসদীয় ধারায় এই আলোচনা হচ্ছে, সেখানে কোনো প্রস্তাব আনা অথবা ভোটাভুটির কোনো আইন নেই। তার প্রয়োজনও নেই। গোটা বিশ্বই হিংসামুক্ত হোক, এই বার্তাই সংসদ থেকে দেয়া হচ্ছে।
মোদি সরকারের ব্যাখ্যা, ইসরাইলের বিরুদ্ধে দিল্লি নিন্দা প্রস্তাব আনবে কি না তা ফিলিস্তিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল নয়। তা নির্ভর করছে ওই অবস্থান নিলে আখেরে ভারতের লাভ -ক্ষতির ওপর। এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেয়ার প্রশ্নই উঠছে না। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও চাননি মোদি। কিন্তু সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জাভড়েকর আলোচনায় রাজি হন। তখন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু দাবি করেন, তিনিও বিষয়টি নিয়ে কিছু জানতেন না। ফলে, দলের মধ্যেই চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
সোমবার অবশ্য সেই অস্বস্তি কাটিয়ে বিজেপি-র সব সাংসদরাই একসুরে কথা বলেছেন গাজা বিতর্কে। বিজেপি সাংসদ চন্দন মিত্র জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কে পিছিয়ে আসতে চায় না ভারত।
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ এবং আনন্দ শর্মা, জেডিইউ-র শরদ যাদব আক্রমণ করেন সরকারকে। সীতারামের কথায়, “ইসরাইল প্যালেস্তাইনের জমি দখল করে আক্রমণ চালাচ্ছে। আগে এই দখলদারি মুক্ত করা হোক।”
অবিলম্বে এই ঘটনার নিন্দা করে সংসদীয় প্রস্তাব নিতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেন ইয়েচুরি। পাশাপাশি ইসরাইলের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ করারও দাবি তোলেন তিনি।
আনন্দ শর্মা প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্রিকস সম্মেলনের মঞ্চে গাজা নিয়ে বিবৃতি দেননি কেন? রাশিয়া বা চীনের মতো দেশের সঙ্গে মোদি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন কি না তা জানতে চান ইয়েচুরি। একটি খসড়া প্রস্তাব পড়ে শোনান গোলাম নবী আজাদ। তাতে ইসরাইলকে এখনই অস্ত্র প্রয়োগ বন্ধ করতে বলা হয়। শরদ যাদবের দাবি, সাম্প্রদায়িক কারণেই কেন্দ্রের ইসরাইলের পাশে আছে।
দীর্ঘ জবাবি বক্তৃতায় একে একে বিরুদ্ধ যুক্তিগুলি খণ্ডন করেন সুষমা। তিনি জানান, সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মোদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না, এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি জানান, সৌদি আরবে অন্যায়ভাবে আটক ১৭ জন সংখ্যালঘুকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। ইরাকে বন্দি থাকা কেরলের খ্রিস্টন নার্সদেরও আপৎকালীন ভিত্তিতে ফিরিয়ে এনেছে সরকার।
সীতারাম ইয়েচুরির উদ্দেশে সুষমা বলেন, “২০০৮ সালে সংঘর্ষে এক হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। তখন বামেরা সরকারের সহযোগী দল ছিল। তখন কেন আপনারা মনমোহন সরকারকে সংসদীয় প্রস্তাব আনার পরামর্শ দেননি?”-ওয়েবসাইট।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৩:৫৯ ৩৫০ বার পঠিত