কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ঢাকা: নানা জল্পনা-কল্পনার পর আন্দোলন চাঙ্গা করতে দল পূনর্গঠনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করেছে বিএনপি। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ থাকলেও নতুন কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদরে এ অভিযোগ কম। তারা বলছেন, কিছুটা হলেও আগের তুলনায় দলের সাচ্চা নেতাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। চাইলে নতুন কমিটি সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলনে ভুমিকা রাখতে পারবে।তবে আবারো কমিটি ‘পকেটবন্দী হলে এবং অল্প সময়ে অঙ্গ সংগঠনের ভালো কমিটি করতে না পারলে আন্দোলনে হোচট খাওয়ার আশঙ্কা দলের কর্মী-সমর্থকদের।
শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকার সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের ঢাকা মহানগর কমিটির ঘোষণা দেয় বিএনপি। এতে চার সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদও রাখা হয়েছে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে থানা ও ওয়ার্ড, পরবর্তী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।কেউ কেউ আবার সমালোচনাও করছেন। তবে অনেকেই কমিটি নিয়ে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ দেখিয়ে মহানগর কমিটি ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন স্বয়ং বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এরপর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। তবে মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা নিজেই তখন পদ থেকে অব্যাহতি চাইলে এই প্রক্রিয়ায় নতুন মোড় নেয়।
জানা যায়, প্রথমে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহকে দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা করলেও অসুস্থতার কারণে তিনি তা নিতে আগ্রহী হননি। পরে মির্জা আব্বাস, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ আরো কয়েকজনের নাম এলে তারাও দায়িত্ব নিতে চাননি। কিন্তু সবশেষ খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জেষ্ঠ্য নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আব্বাসকে রেখেই নতুন কমিটি করেন।
কেন আব্বাস- সোহেলের কমিটি?
কেন আব্বাস-সোহেলের হাতে মহানগরের নেতৃত্ব- এটি জানতে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মির্জা আব্বাস আন্দোলনে ঢাকার ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানানোর ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। এছাড়া মহানগরে ভালো অবস্থান থাকার পরও তাকে কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি এমন অভিযোগও ছিল এই নেতার। পদ দেয়ার ক্ষেত্রে এটাকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন কেউ কেউ। এখন দলের হাইকমান্ড দেখতে যান মির্জা আব্বাস কেমন করেন।
আবার মির্জা আব্বাস অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা রয়েছে। মহানগরে তার বিপুলসংখ্যক সমর্থকও আছে বলে হজানা যায়। নেতাকর্মীদের তার ওপরে আস্থাও রয়েছে। এসব বিবেচনায় তাকে আহ্বায়ক পদ দেয়া হয়েছে বলেও কেউ কেউ বলছেন।
এছাড়া দলে অসম্ভব প্রভাবশালী বলে পরিচিত মোসাদ্দেক আলী ফালুরও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন বলে জানা যায়। আব্বাসের চাচাতো ভাই ফালু। আর ফালুকে এই অবস্থায় আনার পেছনে আব্বাসের একক অবদান রয়েছে।
জানা যায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানেরও পছন্দে ছিলেন মির্জা আব্বাস।
অন্যদিকে নতুন কমিটির সদস্যসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।দারুণ বাগ্মী। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলেরও সভাপতি। দলের যেকোনো অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলকে শক্তিশালী বলা হয়ে থাকে। আর তরুণ এই নেতার ব্যক্তিগত ইমেজও ভালো। তাকে দিয়ে গ্রুপিং হবে না এমনটাও আশা করছে বিএনপি। দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সদস্যস চিব হিসেবে সোহলেই খালেদা জিয়ার পছন্দে ছিলেন।
নয়াপল্টনে নতুন কমিটি নিয়ে কথা বললে মোহাম্মদপুর থানার একজন বিএনপির নেতা বলেন, “নতুন কমিটি চাইলেও সাদেক হোসেন খোকার সহযোগিতা ছাড়া কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।” তবে কমিটি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বললেন, “কমিটিতে সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন লোক কম আছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।”
সরকারি বাংলা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “মহানগরের নতুন কমিটি চাইলে দল গোছাতে পারবে। তবে আন্দোলনে সফল হতে চাইলে ত্যাগী নেতাদের দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে অঙ্গ সংগঠনেরও কমিটি দিতে হবে।”
এছাড়া কমিটি দেখভালের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ রাখাকেও নেতাকর্মীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ এই পদে থাকতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আমি আসলে এসব পদে থাকতে চাই না।কিন্তু দল দায়িত্ব দিলে তো নিরুপায়।”
অন্যদিকে কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে খোকা-সালামকে রাখা এবং অনেকগুলো সদস্য পদ রাখা নিয়ে মির্জা আব্বাস কিছুটা নাখোশ বলে জানা গেছে।
এদিকে খোকা দেশের বাইরে থাকলেও তার অনুসারীদের একটি গ্রুপ ইতিমধ্যে আব্বাস, না সোহেলের হয়ে কাজ করবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরেছেন বলেও জানা গেছে।
যুবদলের এক নির্বাহী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সাদেক হোসেন খোকা চাইলেও আবদুস সালামের জন্য তিনি সংগঠন গোছাতে পারেন নি।এজন্য আন্দোলনেও দল ব্যর্থ হয়েছে। এদের কমিটিতে না রাখায় আমরা খুশি।”
এদিকে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করায় অনেককে উজ্জীবিত দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে বলছেন, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সব মহলে তার যোগাযোগ আছে। যা আন্দোলনের কর্মকৌশলের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখবে।
তবে নতুন কমিটিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মোকাবেলা করতে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। ঢাকার পূর্ব শান্তিনগর ইউনিটের একজন নেতা জসিম উদ্দিন আবেদ বলেন, “কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে নগরের বিভিন্ন ইউনিটে যেসব কমিটি হবে সেখানে ত্যাগী নেতাদের স্থান দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “এখন আমরা দেখব কারা পদ পায়। তৃণমূল থেকে পদ পেলে আন্দোলন চাঙ্গা হবে। আত্মীয়-স্বজন হওয়া বা অন্য কোনো কারণে পদ পেলে কমিটি ভালো হবে না।”
আর খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ও নতুন কমিটির সদস্য ইউনুস মৃধা বলেন, “বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ না করতে পারলে নতুন কমিটিও ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয় এবং গ্রুপিং-লবিং না থাকে, সেক্ষেত্রে আব্বাসপন্থী বা খোকাপন্থী বাদ দিলে এ কমিটি একটি গতিশীল কমিটি হবে।”
এ ব্যাপারে নতুন কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগঠনকে সুসংগঠিত করে মাঠে নামার কথা জানিয়েছেন। নতুন বার্তা ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতিটি ইউনিট থেকে ওপর পর্যন্ত দলকে সংগঠিত করে শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করা ও জনগণকে সাথে নিয়ে মাঠে নামব।”
আর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন কমিটি ঢাকায় সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলনে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৪:৩৮ ৪৩৭ বার পঠিত