কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ স্ত্রী সাদিয়ার ‘বদান্যতায়’ সুইডেনের পর এবার লেবাননেও লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছেন রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার। বাংলাদেশের মান সম্মান আরব সাগরে বিসর্জন দিয়েছেন বৈরুতে নিযুক্ত এই আনাড়ি কূটনীতিক। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে দালাল-সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ও তার স্ত্রীর প্রত্যক্ষ যোগসাজশের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের অভ্যন্তরে জনৈক নিরীহ বাংলাদেশিকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা এবং লোক লাগিয়ে আরেক বাংলাদেশিকে অপহরণ করানোর অভিযোগে গওসোল আযম ও তার স্ত্রী সাদিয়াকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৈরুত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে লেবানিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রদূতকে বৈরুত ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কলংকজনক এই ইস্যুতে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। পথভ্রষ্ট রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া উইংয়ের ডিজি নজরুল ইসলাম জরুরি ভিত্তিতে বৈরুতে এসে পৌঁছেছেন। ১৮ জুলাই শুক্রবার গওসোল আযমকে বুঝিয়ে দেয়া হয় দেশে ফেরার বিমান টিকিটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। ২০১০ সালে বেশ ক’জন সিনিয়র কূটনীতিককে ডিঙিয়ে তিনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পান সুইডেনে। ওই সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে গওসোল আযম সেই সুযোগটি নিয়েছিলেন বলে শোনা যায় কূটনীতিক মহলে।
সুইডেনের কলংক নিয়ে এক বছর আগে লেবাননে যোগ দেয়া রাষ্ট্রদূত গওসোল সেই কলংক মাথায় নিয়েই বৈরুত ছাড়ছেন রোববার সূর্যাস্তের আগে। এর আগে ১৬ জুলাই বুধবার রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্ মন্ত্রণালয়ে ডেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন স্বয়ং লেবানিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিব্রান বাসিল। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রাষ্ট্রদূত গওসোল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় লেবানিজ মিডিয়াতে। ন্যাক্কারজনক ঘটনায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে বৈরুতের বাংলাদেশ কমিউনিটিতেও। রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম ও স্ত্রী সাদিয়ার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগের পাহাড় ছিল লেবানিজ পুলিশের কাছে।
দালাল সর্দার সুমন ভূইয়া ও শহিদুল ইসলাম কিরনের সহায়তায় এবং মাসুদ, জুয়েল, জসিম, সাঈদা জামাল, জনি ও দেলোয়ার সহ মুখচেনা দালাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত দম্পতি কর্তৃক দূতাবাসের ভেতরে-বাইরে দিন-রাত অপকর্মে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে পাওয়ার পর থেকেই অ্যাকশনে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল লেবানিজ প্রশাসন। মাফিয়া চক্রের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীর এতটাই সখ্যতা গড়ে ওঠে যে, রীতিমতো বৈরুতের ‘গডমাদার’ হিসেবে আবির্ভূত হন এই বাংলাদেশি নারী।
স্বামী গওসোল আযমের প্রশ্রয়ে দিনকে দিন চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেন সাদিয়া। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সাদিয়ার নির্দেশে এ সপ্তাহে অপহরণ করা হয় বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি লেবাননের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আকবর মোল্লাকে। বৈরুতের জনপ্রিয় এই কমিউনিটি ব্যক্তিত্বের কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যে তাকে উদ্ধার করে নিজস্ব হেফাজতে রেখেছে। প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাইয়ে বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হলে সুইডেন থেকে এসে যোগ দেন আগে থেকেই চরম বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার।
সুইডেনে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে স্টকহোমের অভিজাত এলাকায় রাষ্ট্রদূতের নিজ বাসভবনে স্ত্রী সাদিয়া কর্তৃক গৃহকর্মী তৈয়বা নিয়মিত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে তৈয়বার দায়ের করা অভিযোগ পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী সাদিয়াকে দেশত্যাগের নির্দেশ দেয়। বেগতিক অবস্থা সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকার তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে গওসোল আজম সরকারকে স্টকহোম থেকে বৈরুতে সরিয়ে আনে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রদূত গওসোল আজম সরকার বেছে নেন চিহ্নিত দালাল পরিবেষ্টিত পরিবেশকে। কথায় বলে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও …। যা হবার তাই হলো বৈরুতে। বাংলাদেশের মান-সম্মান ডুবলো আরব সাগরে।
এদিকে রাষ্ট্রদূত গওসোল আযমকে ঢাকায় ফেরত নেবার সময়পোযোগী সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বৈরুতের জনপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি লেবাননের আহ্বায়ক মফিজুল ইসলাম বাবু। বাংলাদেশ দূতাবাসকে কলঙ্কমুক্ত করতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তার নেতৃত্বে স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটিকে।
সস্ত্রীক গওসোল আযম সরকারের বিদায়কে লেবানন প্রবাসী জনগণের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি লেবাননের তরফ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের প্রতি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় অর্জিত হওয়ায় বিজয় উৎসবের প্রস্তুতি চলছে এখন বৈরুতে। তবে ভিত নড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মরণ কামড় দিতে তৎপর রয়েছে সংঘবদ্ধ দালাল-সিন্ডিকেট। প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে তাই বৈরুতের সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিরা। বৈরুতের গণমাধ্যমে আলোচিত এই রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে প্রতিবেদনের লিঙ্ক: https://www.youtube.com/watch?v=FTRw7-6lzek&list=UUD6NFvK_nSZgIm1bSb5ZBBA
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৫:২৮ ৪৪৩ বার পঠিত