বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ : ঈদের পর খালেদা জিয়া ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুত হচ্ছে নীলফামারী জেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা। নিজেদের সবটুকু শক্তি নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে বদ্ধপরিকর তারা।যদিও তাদের শক্তি সামর্থ্য নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সাংগঠনিক কাঠামোর দিক থেকে বিএনপির অবস্থা খুব একটা ভালো নেই।
ভোটের রাজনীতিতেও প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ, না শত্রু-না মিত্র জাতীয় পার্টি, হরিহর আত্মা জামায়াতের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি।
তবে গোছানো সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মজবুত অবস্থানে আছে আওয়ামী লীগ। ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলায় সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে তারা।
সর্বশেষ গত ১২ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের উপস্থিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তৃণমূলের নেতারা।
বুধবার সারাদিন নীলফামারী জেলা সদরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন সব তথ্যই পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির দাপট তেমনটি নেই। ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নীলফামারীর ৪টি আসনের কোনোটিতেই জয় পায়নি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপি।
কেবল ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ আসনে নির্বাচিত হয় দলটি। এমনকি সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে ৬টির মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী।
তবে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলেও নীলফামারী জেলা বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
তারা জানিয়েছেন, মাস তিনেক আগে পুরোনো কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডভোকেট আনিসুল আরেফিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও মো. শামসুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
এরই মধ্যে এই আহ্বায়ক কমিটি সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টির কাউন্সিল সেরে ফেলেছে। বাকি ৮টি ইউনিয়নের কাউন্সিল ঈদের আগেই করা হবে বলে জানান তৃণমূলের নেতারা।
এছাড়া ৬টি উপজেলা ও ৪ পৌরসভায় রয়েছে বিএনপির একটি করে কমিটি। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকদের মধ্যেও রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। কোনো ধরনের বিরোধ তাদের মধ্যে নেই বলে জানান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জহিরুল আলম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সবগুলো ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় কাউন্সিল চলছে। আশা করছি ঈদের আগেই সব কাউন্সিল শেষ করতে পারবো। ঈদের পর ম্যাডামের দেওয়া কর্মসূচি সফল করতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
তবে জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. আলমগীর স্বপন বলেন, আহ্বায়ক আনিসুল আরেফিন চৌধুরী ও সদস্য সচিব মো. শামসুজ্জামান একলা চল নীতি অনুসরণ করছেন। তারা দু’জন খালেদা জিয়ার ২০ দলীয় রাজনীতি অনুসরণ করছেন না।
জামায়াতের প্রতি বিশেষভাবে ‘দুর্বল’ বিএনপির এই নেতা বলেন, জামায়াতের সমর্থন ছাড়া নীলফামারীতে বিএনপি কিছুই করতে পারবে না। জামায়াতের সঙ্গে লিঁয়াজো হয়নি বলেই সর্বশেষ নির্বাচনে একটি উপজেলাতেও জিততে পারেনি বিএনপি। জামায়াতকে ছাড়া আন্দোলন করতে গেলে উপজেলার মতো পরিণতি হতে পারে।
এদিকে আন্দোলন নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও প্রস্তুতি যাই থাকুক না কেন তা মোটেই আমলে নিচ্ছে না জেলা আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিকভাবেই বিরোধী জোটের আন্দোলন মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ১৯৯৬ সালের নির্বাচন ছাড়া স্বৈরাচার পতনের পর সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বাকি তিন নির্বাচনে নীলফামারীর চারটি আসনে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছে। আর এ সাফল্যের পেছনে কাজ করছে তাদের ঐক্যবদ্ধতা।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর ১৯৯৮ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি বাকের ভাই খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হককে সঙ্গে নিয়ে সংগঠন গোছানোর কাজে হাত দেন তিনি। ১৬ বছর আগে শুরু করা তার সেই প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারীর ৬ উপজেলা ও ৪ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একটি করে কমিটি রয়েছে। কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পদকের মধ্যে রয়েছে চমৎকার বোঝাপড়া। কেবল জলঢাকা উপজেলার সভাপতি আনছার আলী মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেলের মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ওই দ্বন্দ্ব নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক আসাদুজ্জামান নূর।
নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে যে আন্তরিকতা রয়েছে সারা বাংলাদেশে সেটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের অভিভাবক আসাদুজ্জামান নূরকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ঐক্যের কাছে বিএনপি দাঁড়াতে পারবে না। তাছাড়া আন্দোলন করার মতো ক্ষমতা বা ঐক্য বিএনপির নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন বলেন, নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত শক্তিশালী দল। এখানে বিএনপির কোনো অবস্থান নেই। সুতরাং তাদের আন্দোলনের হুমকি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৩:৫৩ ৩৯৭ বার পঠিত