বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সংসদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে টিআইবিকে ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’ অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ হুইপ আ স ম ফিরোজ।0
দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন নিয়ে প্রকাশিত টিআইবির ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ প্রতিবেদনে সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতির কারণে যে আর্থিক ক্ষতির কথা বলা হয়েছে তা ‘মনগড়া’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত ৭ জুলাই প্রকাশিত দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবণতা কমে এলেও প্রথম অধিবেশনে সদস্যদের উপস্থিতির ঘাটতি দেখা গেছে। তাতে মোট ১৭ ঘণ্টা ৭ মিনিট কোরাম সঙ্কট হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮ কোটি এক লাখ টাকা।
অধিবেশনে আইন প্রণয়নে মোট সময়ের মাত্র এক দশমিক ৮ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
টিআইবির ওই বক্তব্য নাকচ করে তাদের গবেষণা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আ স ম ফিরোজ।
বুধবার বিকালে সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “টিআইবির প্রতিবেদনে দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোরাম সঙ্কটের কারণে ৮ কোটি এক লাখ টাকার অপচয়ের কথা বলা হয়েছে। কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে তারা এই অংক তুলে ধরেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
“কারণ সংসদ অধিবেশন না চললেও সংসদ সচিবালয়ের সকল কার্যক্রম সারাবছরই অব্যাহত থাকে। আর এই কার্যক্রম পরিচালনায় একটি নির্দিষ্ট খরচ থাকে, যা সংসদ অধিবেশন না চললেও হয়ে থাকে। কোরাম সঙ্কটের কারণে অপচয়ের ধারণাটি মনগড়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।”
এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে টিআইবির আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে হুইপ আতিউর রহমান আতিক, শাহাব উদ্দিন ও সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন উপস্থিত ছিলেন।
টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছেন কি না জানতে চাইলে ফিরোজ বলেন, “না, ওই প্রতিবেদন আমরা প্রত্যাখ্যান করছি না। কারণ এর মধ্যে অনেক ভালো প্রস্তাবনা রয়েছে, যেগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো স্পর্শকাতর। সংসদ নিয়ে এমন কিছু কথা এসেছে যাতে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে। এসব বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে।
“আমি আশা করি, টিআইবি ভবিষ্যতে যে কোন ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশে আরো আন্তরিক এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে।”
‘পার্লামেন্টওয়াচ’ প্রতিবেদনে বিরোধীদল প্রসঙ্গে টিআইবি বলেছে, জাতীয় পার্টি অধিবেশন বর্জন না করলেও সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে না।
এ বিষয়ে প্রধান হুইপ বলেন, “দশম জাতীয় সংসদে একটি কার্যকর বিরোধী দলের উপস্থিতি এদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার নতুন মাইল ফলক।
“বিরোধী দল জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে টিআইবির পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে তা নিতান্তই অমূলক। বরং সংসদ অধিবেশনগুলোতে বিরোধী দলের কার্যকর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।”
তিনি বলেন, “বিগত সংসদ অধিবেশনগুলোতে বিরোধী দলের অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার, ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক কথাবার্তা ব্যবহারের যে নজির, তা বর্তমানে অনেকাংশে দূর হয়েছে।”
‘ব্যবসায়ী অধ্যুষিত’ সংসদে আইন প্রণয়নে সময় কম ব্যয় হয়-টিআইবির এমন পর্যবেক্ষণ নাকচ করে ফিরোজ বলেন, “অনেকে পেশায় ব্যবসায়ী হলেও রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা। তাদেরও হিসাবের মধ্যে আনা উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই ক্যাটাগরি রয়েছে।”
তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনায় বিরোধী দলের পাশাপাশি সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সুশীল সমাজের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমেই সরকার তাদের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারে। সরকারের অনেক সফলতা আছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এব্যাপারে টিআইবির কোন বক্তব্য নেই।”
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৬:০১ ৩৮৮ বার পঠিত