বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সূর্য ডুবে যাওয়ার পর ফ্লাডলাইটে আলোকিত মারাকানায় ফিরলো রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সেই রাত। ২৪ বছর পর আবার সেই আর্জেন্টিনাকেই হারিয়ে ইতিহাস গড়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো জার্মানি। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে প্রথমবারের মতো ট্রফি গেল ইউরোপে।
অতিরিক্ত সময়ে জার্মানিকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন বদলি হিসেবে নামা মারিও গোটসে। শেষ বাঁশি বাজার আগে ফ্রি-কিক থেকে সমতা ফেরানোর একটা সুযোগ পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু শটটি মারলেন অনেক উপর দিয়ে, চোখেমুখে ফুটে উঠলো হতাশা। স্বদেশি কিংবদন্তি মারাদোনার পাশে আর বসা হলো না আর্জেন্টিনা অধিনায়কের।
মারাকানার পাশে করকোভাদো পাহাড়ের উপর দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার তাই আলোকিত হলো জার্মান পতাকার রঙে।
২৪ বছর আগে জার্মানির কাছেই হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছিল দিয়েগো মারাদোনার আর্জেন্টিনার। এবার তাদের কাছেই হেরে স্বপ্ন ভাঙল লিওনেল মেসিদের। গত দুই বিশ্বকাপে এই জার্মানির কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
মারাকানার ফাইনালে ৯০ মিনিটে গোল পায়নি আর্জেন্টিনা বা জার্মানির কেউই। খেলা তাই গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
পুরো ম্যাচে আক্রমণ ফুটবল খেলে জার্মানি। তবে আর্জেন্টিনার রক্ষণসীমায় গিয়ে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল ইউরোপের দেশটির। গোলে নেয়া দুর্বল শট গুলো ফেরাতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না সের্হিও রোমেরোর। কিন্তু গোটসেকে ফেরাতে পারেননি তিনি।
প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলা আর্জেন্টিনাও সুযোগ কম পায়নি। কিন্তু মেসি, গনসালো হিগুয়াইন আর রদ্রিগো পেলাসিওরা প্রায় সব শটই বাইরে মেরে নষ্ট করেন। প্রথমার্ধে দুই দলই নষ্ট করেছে একটি করে নিশ্চিত গোলের সুযোগ।
নবম মিনিটে প্রথমবারের মতো ঝলক দেখান লিওনেল মেসি। ডান দিক থেকে বল পান তিনি। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে গতিতে পরাস্ত করে ডি বক্সে ঢুকে গোললাইন থেকে ক্রস করেন কিন্তু তা ফিরিয়ে দেন বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার।
পরের মিনিটে আবার আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। এবার পাবলো সাবলেতার সেই ক্রস বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছলেও টিতে পা ছোঁয়াতে পারেননি এনসো পেরেস ও গনসালো হিগুয়াইন।
কিছুক্ষণ পর ফিলিপ লামের ক্রসে মাথা লাগাতে পারেনি মিরোস্লাভ ক্লোসা।
২১তম মিনিটে জার্মানির টনি ক্রুস দারুণ একটি ‘উপহার’ দেন হিগুয়াইনকে। হেড করে সতীর্থকে দিতে গিয়ে হিগুয়াইনকে বল তুলে দেন তিনি। নাপোলি স্ট্রাইকারের কাছাকাছি জার্মানির কোনো খেলোয়াড় ছিলেন না। মানুয়েল নয়ারকে একা পেয়েও বাইরে মেরে দলকে এগিয়ে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করেন তিনি।
৩০তম মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে ভালো একটি সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। মেসি ডান দিকে বাড়ান এসেকিয়েল লাভিস্সিকে। তার ক্রস থেকে নয়ারকে পরাস্ত করে জালে জড়ান হিগুয়াইন। কিন্তু সহকারী রেফারি উচিয়ে রেখেছিলেন অফসাইডের পতাকা।
দশ মিনিট পর মেসি ডান দিক থেকে ঢুকে পড়েন। কিন্তু জেরোম বোয়াটেংকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি।
৪৩তম মিনিটে মাসচেরানোর ভুল পাস থেকে ভালো একটা সুযোগ পান ক্রুস। তবে তার শট ফেরাতে কোনো সমস্যা হয়নি সের্হিও রোমেরোর।
যোগ করা সময়ে প্রায় এগিয়েই যাচ্ছিল জার্মানি। ক্রুসের কর্নার থেকে বেনেডিক্ট হুভেডেসের হেড ফেরানোর কোনো সুযোগই ছিল না রোমেরোর। দুর্ভাগ্য তিনবারের চ্যাম্পিয়নদের। বল বারে লেগে ফিরে। কাছেই টমাস মুলার ছিলেন, কিন্তু তিনি হয়ে যান অফসাইড। আর বল আয়ত্বে নেন রোমেরো।
৪৭তম দারুণ একটি সুযোগ পান মেসি। ডি বক্স থেকে তার শট ফেরানোর কোনো সুযোগ ছিল না নয়ারের। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি চারবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
৭১তম মিনিটে একটি সুযোগ নষ্ট করেন শুরলে। ডি বক্সে সুবিধাজনক জায়গায় পেয়েও বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি তিনি।
৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এ নিয়ে টানা তিনটি ফাইনাল অতিরিক্ত সময়ে গড়ালো।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই আর্জেন্টিনার ত্রাতা রোমেরো। বাম দিক থেকে ডি বক্সে বল পাওয়া শুরলের হাফভলি ঠেকিয়ে দেন তিনি।
ছয় মিনিট পর সুযোগ আসে রদ্রিগো পালাসিওর সামনে। মার্কোস রোহোর ক্রস ডি বক্সে বুক দিয়ে নামিয়ে এগিয়ে আসা নয়ারের মাথার ওপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। অল্পের জন্য বল বাইরে চলে যায়।
১১৩তম মিনিটে গোটসের গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। বাঁদিক দিয়ে আন্দ্রে শুরলের ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে বল মাটিতে পড়ার আগেই বাঁ পায়ের শট জালে জড়ান বায়ার্ন মিউনিখ তারকা।
অতিরিক্ত সময়ে এই প্রথম কোনো গোল খেল আর্জেন্টিনা। এবারের আসরে এই প্রথম কোনো ম্যাচে আগে গোল খেল দলটি।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৫১:১৬ ৪৪২ বার পঠিত