বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সম্প্রতি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সাকিবকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে না দিয়ে চটজলদি নেওয়া এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই দেশে-বিদেশে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
বাংলাদেশের সহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে নানা প্রতিবেদনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত অসংখ্য স্ট্যাটাস ও মন্তব্য আমরা ইতোমধ্যেই পড়েছি।
তবে এটা ঠিক যে সাকিবের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু তারপরও তার মত একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে, যিনি কি না বহুবার বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন তাকে ছয় মাসের জন্য জাতীয় দলে এবং দেড় বছরের জন্য আন্তর্জাতিক লীগে নিষিদ্ধ করাটা খুব বেশি কঠোর শাস্তি হয়ে যায়।
কদিন আগেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিব ছিলেন অন্যতম সেরা পারফর্মারদের একজন। শুধু তাই নয়, আইসিসি র্যাংকিংয়ে বেশ কয়েকবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে উঠে এসেছে তার নাম।
আমরা মোটেও বোর্ডের অধিকার ও কর্তৃত্বে নাক গলাতে আসিনি। হতে পারে অতীতে কয়েকবার তার বেশ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ আচরণকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন কেন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা হলো না?
সাকিবের শাস্তি ঘোষণার পর, দেশে বিদেশে প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে সাকিবের শাস্তি কার্যকর করার ব্যাপারে বিসিবি তার অবস্থানে অটল থাকতে পারবে না। এমনকি বিসিবির এ সিদ্ধান্ত আদালতেও উঠতে পারে।
যেখানে একজন খুনীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে শক্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ ধর্ষণ-খুনের অসংখ্য মামলা ঝুলে আছে- সেখানে সাকিবের বিরুদ্ধে কেন এত কঠিন সাজা?
কোন সন্দেহ নেই সাকিবের অদায়িত্বশীল আচরণ শাস্তির দাবি রাখে। কিন্তু দেশে ফিরে সে তার ভুল উপলব্ধি করার পর বিসিবি পারতো ‘সাপও মরবে কিন্তু লাঠিও ভাঙবে না’ গোছের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে। আমরা কেউ জানি না, বিসিবি সভাপতির সাথে সাকিবের কী কথা হয়েছে।
তাই এখন পরিস্থিতি দাবি করে, এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বিসিবির কী ব্যাখ্যা? কেন এ রকম কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাকে কারণ দর্শানোর
নোটিশ দিয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হলো না?
অনেকেই এখন বলতে শুরু করেছে, এটা সাকিবের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কী না।
আন্তর্জাতিক ও আইপিএল-এর মত টুর্নামেন্টগুলোর অন্তরালে এ রকম অনেক কিছুই ঘটে থাকে বলে আমরা জানি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সহ বাংলাদেশের ক্রিকেটে সক্রিয় কোনো আন্তর্জাতিক মাফিয়া গোষ্ঠীকে কী সাকিব খেপিয়ে তুলেছিলেন?
কদিন আগেই ম্যাচ পাতানোর দায়ে কঠোর শাস্তি পেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরেক আইকন মোহাম্মাদ আশরাফুল। সেখানেও অনেক প্রশ্ন ছিল,
আশরাফুল বলির পাঠা ছিলেন কী না? না হলে সামান্য একটি ম্যাচ পাতানোর দায়ে কেন তার ক্যারিয়ারটি এভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হবে! এক সুপরিকল্পিত দলীয় অংশগ্রহণ ছাড়া শুধু একজন ব্যক্তির পক্ষে কি ম্যাচ পাতানো সম্ভব।
তবে কি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাফিয়া গোষ্ঠীকে বাঁচানোর জন্যই সাকিব ও আশরাফুলের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ? সাকিবের বিরুদ্ধে নেয়া অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত এ আশঙ্কাকেই জোরদার করে!
সাকিবের শাস্তির পর প্রশ্ন উঠেছে কেন বিসিবি এত দীর্ঘ ‘শীতনিদ্রায় ছিল? তারা কেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়গুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রথমেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া বাংলাদেশের সাম্প্রতিক খারাপ পারফর্মেন্সের দায় কি বিসিবিও এড়াতে পারবে। তাদের বিরুদ্ধেও উঠেছে দল নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি ও গাফলতির অভিযোগ।
এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি ও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের লজ্জাজনক পারফরম্যান্সের জন্য বিসিবির দল নির্বাচনও কি দায়ী নয়?
আমরা ভেবেছিলাম বিসিবি ব্যর্থতার দায় ঘাড়ে নিয়ে এসবের ব্যাখ্যা দেবে।
কি্ন্তু বিসিবি কিছুই করেনি! এ রকম আরও অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন বিসিবিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিসিবির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও স্বজনপ্রীতির আঙ্গুল তুলছেন।
কেন অস্ট্রেলীয় কোচ তার পুরো কোচিং স্টাফ নিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন। বর্তমান কোচ ও কোচিং স্টাফকে কিসের মাপকাঠিতে এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হলো।
এ রকম আরও অসংখ্য প্রশ্ন আছে যার জবাব না মেলায় বর্তমানে বিসিবিতে বিরাজ করছে এক গুমোট ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলে সাকিব-আশরাফুলদের মত ঘটনা আরও ঘটতেই থাকবে। আর এসবের জন্য সবার আগে দায়ী বিসিবি ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই।
এখন উচিত সাকিব আপিল করলে সেই আপিল বিবেচনায় নেয়া এবং পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করা।
তদন্ত শেষে সাকিবের নিঃশর্ত লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করে সামান্য কিছু জরিমানা দিয়ে তাকে তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে।
এমনকি তার যদি আচরণগত সমস্যা থেকেও থাকে, তবে তাকে একজন ভাল মনোরোগবিদের কাছেও পাঠানো যেতে পারে।
যাই হোক না কেন বিশ্ব ক্রিকেটে সেই আমাদের একমাত্র চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৪৩:০৪ ৩৩৫ বার পঠিত