বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জনবল সংকট আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ভোলা সদরের রাজাপুর স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ রোগীরা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
কেউ কেউ আবার চিকিৎসা নিতে এসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল দশা দেখে ভয়ে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। এটিই চরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
মাত্র একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক দিয়ে চলছে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এখানকার মেডিকেল অফিসারের পদটি শূন্য থাকায় যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
এতে নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোলা সদরের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুরের চরে ২০ হাজার মানুষের বাস। সেখানকার জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কার না করায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের চারপাশের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে পলেস্তারা (প্লাস্টার)। যে কোনো মুহূর্তে ভবনের কিছু অংশ বা পলেস্তারা ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রোগীরা। ফলে চরবাসী সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছেন।
বুধবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম বেগম জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এটি ছাড়া এখানে আর কোনো ক্লিনিক না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে তাদের চিকিৎসা নিতে আসতে হয়।
রেহানা পারভিন বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই নারী। কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আসতে আমাদের ভয় হয়, কখন ভেঙে মাথায় পড়ে!
আকলিমা আক্তার বলেন, শুধু ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এখানে চিকিৎসকই নেই।
রহিমা জানান, প্রায়ই এ ভবনের ইট, প্লাস্টার খসে পড়ে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের আতঙ্কে থাকতে হয়।
মৎস্য ব্যবসায়ী অর্ণব মজুমদার বলেন, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় চরবাসী যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামত প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিই একমাত্র ভরসা চরবাসীর জন্য। প্রতিদিন এখানে ৫০/১০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। যাদের বেশিরভাগই নারী। বর্তমানে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট ও চতুর্থ শ্রেণির একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় সাধারণ রোগের চিকিৎসা ছাড়া ছোট বড় কোনো কাটা-ছেঁড়ার অপারেশন হচ্ছে না। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না এখানে। ফলে উত্তাল নদী পেরিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
রাজাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক লুৎফর নেছা বলেন, শুধু রোগী নন, আমিও ঝুঁকির মধ্যে আছি। দোতলা ভবনটি একেবারেই ঝূঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাষ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভোলা পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হক আযাদ বলেন, একদিকে ভবনটি মেঘনার ভাঙন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে, ফাটল ধরায় ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগ পরিদর্শন করেছে। খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৩১:০৫ ৪৪১ বার পঠিত