বঙ্গ-নিউজঃ এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, “দেড় মাস ধরে পরীক্ষা নেয়া আর সম্ভব না। আমরা পাঁচ দিনে পরীক্ষা দিয়েছি। অবশ্যই পরীক্ষা পদ্ধতি বদলাতে হবে। “পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ ছাড়া অন্য কোনো গ্যাপ থাকবে না। ক্লাসরুমে পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে।”নাহিদ বলেন, “পরীক্ষায় অবশ্যই পরিবর্তন আনব। আগের মতো আর পরীক্ষা হবে না। তদন্ত প্রতিবেদনের সাজেশন আমরা গ্রহণ করব। তবে পরীক্ষা পদ্ধতিতে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পারব এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ করব।”
এবারের এইচএসসির বাতিল হওয়া ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছাড়াও ঢাকা বোর্ডের গণিত দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “বোর্ড কর্তৃপক্ষ দুটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ায় সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্ন ছাপিয়ে ওই বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।”
নাহিদ জানান, প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু, লাটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন ছাপানো, ২০ সেট প্রশ্নের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে সেখান থেকে পাঁচ সেট নির্ধারণ এবং প্রশ্ন তৈরি, রেটিং, মডারেশন ও ডিজিটাল প্রিন্টিং সিস্টেমে ছাপার উপযোগী আউটপুট পাওয়ার জন্য সফটওয়ার তৈরি- এই চারটি প্রধান সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
এছাড়া বিজি প্রেস ছাড়া অন্য কোথাও প্রশ্ন ছাপানো, পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র সংখ্যা সীমিত রাখা এবং ঝুঁকিপূর্ণ, জেলা ও উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী কেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বোর্ডভিত্তিক ভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি সম্ভব হলে পরীক্ষার মধ্যে কোনো গ্যাপ না রেখে দিনে দুটি করে পরীক্ষা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া পাবলিক পরীক্ষার বিষয় সংখ্যা ‘যৌক্তিকভাবে’ কমিয়ে অনধিক পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া এবং এমসিকিউ প্রশ্নের নম্বর কমিয়ে আনার বিষয়েও মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাবলিক পরীক্ষা আইনে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে কঠোরভাবে তা প্রয়োগেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
এসব সুপারিশ তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, “যারা প্রশ্ন পেয়েছিলেন তারাও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি, কোনো সূত্রও দেননি তারা। আমরা তাদের কাছ থেকে ওই ধরনের কোনো সহযোগিতাও পাইনি।”
‘তিন সেট প্রশ্ন ছাপাতে চাইলেও বিজি প্রেস ছাপাতে রাজি হয় না’- জানিয়ে নাহিদ বলেন, “তারা দুই সেটের বেশি প্রশ্ন ছাপাতে চায় না। প্রশ্ন ছাপানোর বিকল্প কোনো জায়গাও নেই।”
বিজি প্রেস শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত না হওয়ায় এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা যায় না বলেও জানান নাহিদ।
প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণে সবার মতামত নিয়ে ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এর আগে গত রোববার ১২৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) সোহরাব হোসাইন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর গত ৯ এপ্রিল ঢাকা বোর্ডের এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
পরদিন সোহরাব হোসাইনকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করে এদের ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে এই কমিটি কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেয়।
এই কমিটিকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের সার্বিক বিষয় তদন্ত করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিতে বলা হয়েছিল।
শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ সাদিক, অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৯:৩৫ ৩৬১ বার পঠিত