ডেস্কনিউজঃভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ রাতে ঢাকায় আসছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম একক কোনো দেশে সফর। আগামী শুক্রবার সকালে নয়াদিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ঢাকায় প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ব্যস্ত সময় কাটাবেন। এই সফরের মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশের সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার কৌশলপত্র তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ও দিল্লির কূটনীতিকরা। সুষমার সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে না। তবে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সফরসূচি অনুযায়ী, আজ রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকায় এসে পৌঁছবেন সুষমা স্বরাজ। আগামীকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। মধ্যাহ্ন ভোজ সারবেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিকালে যাবেন বঙ্গভবনে। সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমের সামনে আসবেন সুষমা। সংবাদ সম্মেলনে জানাবেন তার সরকার ও সফরের নানা বিষয় সম্পর্কে। পরে যাবেন থিঙ্কট্যাংক বিআইআইএসএসের কার্যালয়ে। বক্তৃতা দেবেন বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর। রাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন। পরদিন শুক্রবার সকাল ১১টায় নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রভাবশালী নেত্রী সুষমা স্বরাজ। এর আগে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও ড. মশিউর রহমানের সঙ্গে। সূত্র জানায়, এই সফরসূচির মধ্যে কিছু বিষয় আরও যোগ হতে পারে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে শুক্রবার সকালে সাক্ষাৎ সূচি নির্ধারিত হতে পারে। আরেকটি সূচি যোগ হবে ঢাকার সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ সূচি আছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা গতকাল বিকালে বলেন, ‘নিশ্চিত করে বলার মতো সময় এখনো নেই।’ জানা গেছে, ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ গত সোমবার নয়াদিল্লিতে গেছেন। তিনি আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় ফিরবেন। নয়াদিল্লিতে সুষমা স্বরাজ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে দায়িত্ব পালনরত কূটনীতিকদের নিয়ে বিশেষ সিরিজ বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে অংশ নিতেই মূলত নয়াদিল্লি যান পঙ্কজ শরণ। তবে অনিবার্যভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের আলোচনা।মোদি সরকার গত মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা ছিল। নতুন সরকারের কোনো প্রতিনিধি প্রথমবারের মতো ঢাকায় সফরে আসছেন। তাই সুষমা স্বরাজের এই সফরে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির বিষয়টিকে আলোচনার শীর্ষ এজেন্ডায় রাখা হবে। এর বাইরে ব্যান্ডউইথ রপ্তানির একটি চুক্তি স্বাক্ষরও হতে পারে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের, বিশেষত মোদি সরকারের ‘কূটনৈতিক সম্পর্কের নয়া মোড়’ তৈরির প্রাথমিক দিকনির্দেশনা ও একটি কৌশলপত্র তৈরি করতেই সুষমা স্বরাজের এই সফর। যদিও শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানোও তার এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। সফরে দুই দেশের মধ্যে আগে স্বাক্ষর হওয়া ভিসা সহজীকরণ চুক্তির বেশ কয়েকটি ধারা বাস্তবায়নের ঘোষণাও দিতে পারেন সুষমা স্বরাজ। এর বাইরে উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষত ত্রিপুরা, মিজোরাম ও আসামের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারের প্রস্তাবও থাকবে আলোচনায়। সফরে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন একটি মাত্রা দিতে আগ্রহী মোদি সরকার। এ ছাড়া কংগ্রেস সরকারের আমলে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের এক বিলিয়ন ডলার ঋণের চলমান প্রকল্পসহ দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত ২৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এবার সরকার বা বিরোধী দলের কোনো পদে নেই। তাই তার সঙ্গে প্রটোকল অনুযায়ী কোনো বিদেশি অতিথির সাক্ষাতের বাধ্যবাধকতাও নেই। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সফর করা জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওআইসি মহাসচিব_কেউই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এবারও সে ধরনেরই কিছু হতে যাচ্ছে। তবে ওই দুই বারের ব্যতিক্রম হচ্ছে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের ক্ষেত্রে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওআইসি মহাসচিব সাক্ষাৎ না করায় নিজেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন রওশন। সে কারণে সম্ভবত এবার সাক্ষাৎ করবেন বিদেশি অতিথি। অবশ্য সেখানেও সরকারের বিশেষ আগ্রহের কথা বিবেচনায় রাখছেন বিদেশি অতিথির সফরের সূচি নির্ধারণ করার দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৭:৩৫ ৩৩৩ বার পঠিত