বঙ্গ-নিউজ ডটকম :কোনো ঝামেলা নেই। তার পরও মাঝে মধ্যে তার বুক ধড়ফড় করা শুরু হয়। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তখন। এর সঙ্গে যোগ হয় হাত-পা অবশ হয়ে আসা, বুকে ব্যথা করে। ক্রমে তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল। মনে হয় এখনই মরে যাবে। ইসিজি আর ইকোকার্ডিওগ্রাম করেও কোনো রোগ ধরা পড়ল না। ডাক্তার বদলিয়েও ফল হলো না। মাঝে ওর গায়ে কিন্তু বড় অসুখের সিল পড়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন বলতে থাকেন ওকে কোনো বড় কাজে দিয়ো না। ওর বড় জটিল অসুখ। আসলে এটি একটি টেনশন বা অস্থিরতা জাতীয় রোগ। যাকে আমরা প্যানিক ডিজঅর্ডার বলে থাকি।এ রোগটি ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি হয়। সব বয়সেই হতে পারে, তবে ১৫-২৫ এবং ৪৫-৫৫ বয়সে বেশি হয়। বিপত্নীক, বিধবা, স্বামী-স্ত্রী দুজন আলাদা হয়ে যায়- এ ধরনের পারিবারিক পরিস্থিতিতে বেশি দেখা যায়। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারানো এবং বড় ধরনের মানসিক আঘাত পাওয়া। এদের মধ্যে প্যানিক ডিজঅর্ডার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদি কোনো শিশু ৫ বছরের আগে যৌন হয়রানির শিকার হয় এবং কম শিক্ষিত লোকদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা দেয়।
যেভাবে বুঝবেন যে প্যানিক ডিজঅর্ডার রোগে ভুগছেন
হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা।
দম বন্ধ হয়ে আসা, হাঁপানি রোগীর মতো বড় বড় করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া।
হাত-পা অবশ হয়ে আসা। শরীরে কাঁপুনি হওয়া।
বুকের মধ্যে চাপ লাগা এবং ব্যথা অনুভব করা।
এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো রোগী বলেন হঠাৎ পেটের মধ্যে একটা মোচড় দেয়, তারপর বুক ধড়ফড় শুরু হয়, সঙ্গে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। আর কথা বলতে পারেন না।
বমি বমি ভাব। পেটে অস্বস্তিবোধ ও গলা শুকিয়ে আসা।
পেটে গ্যাস হয় এবং বুকে চাপ বোধ।
দুশ্চিন্তা থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। কোনো কোনো রোগী বুকে ব্যথা ও হাত-পায়ের ঝিমঝিমকে হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ মনে করে প্রায়ই ছুটে যান হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে।
মৃত্যুভয় দেখা দেয়, মনে হয় এখনই মরে যাবেন রোগ যন্ত্রণায়।
নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা।
বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া/ইসিজি করানো।
দূরে কোথাও গেলে স্বজনদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, পথে অসুস্থ হলে সাহায্যের দরকার পড়ে
নামাজ পড়তে গেলে একপাশে দাঁড়ান, যেন অসুস্থ হলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসা যায়।
রোগীদের মধ্যে ভয় কাজ করে এই বুঝি আবার একটি অ্যাটাক হতে পারে।
রোগের লক্ষণগুলো হঠাৎ শুরু হয়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট পর কমে যায়।
সেফটি বিহেভিয়ার- যেমন অ্যাটাকের সময় বসে পড়া, কোনো কিছু হাত দিয়ে ধরে সাপোর্ট নেয়া ইত্যাদি লক্ষণ রোগীর মাঝে দেখা দেয়। যা কি না হৃদরোগীদের মধ্যে লক্ষণীয় নয়।
অন্য রোগের মধ্যেও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে
বিষণ্নতায় দীর্ঘদিন ভুগলে।
শুচিবায়ু নামক রোগেও এই রকম প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
নিছক সামাজিক ভয়ে।
নেশা ছাড়ার পর।
অন্যান্য কারণ
জিনগত কারণ যেমন আত্মীয়ের মধ্যে প্যানিক ডিজঅর্ডার থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
শরীরে অদ্ভুত, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের (সেরোটনিন গাবা ও নরএডরেনালিন) রোগটি দেখা দিতে পারে।
যাদের হার্টের ভাল্বের সমস্যা আছে তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যেসব পরিণতি হতে পারে
সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে এ ধরনের রোগী ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সর্বস্বান্ত হন এবং সব শেষে নিজেই হার্টের রোগী বলে কাজকর্ম ছেড়ে দেন।
বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন।
নেশায় জড়িয়ে যেতে পারেন।
এগোরেফোবিয়া নামক আরও একটি সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। তখন রোগী বাইরে বের হওয়া, হাটবাজার, রেস্টুরেন্ট ও ক্যান্টিন ইত্যাদি জায়গায় যেতেও ভয় পান।
ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
আত্মহত্যার চিন্তা আসতে পারে।
সর্বোপরি এই মানুষটি তার সমস্যার কারণে পরিবার, সমাজ ও জাতির বোঝা হয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসা
নিয়মিত ওষুধ সেবন করা। রোগীকে আশ্বাস দিতে হবে। মনোরোগের চিকিৎসার জন্য মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সঠিক সময়ে সাইকিয়াট্রিস্টের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ফলোআপের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে এসব রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।
-ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
বাংলাদেশ সময়: ১:৪৪:৩৩ ৭১৯ বার পঠিত