কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ মিরপুরের পল্লবী এলাকার কালশী বিহারি পল্লীতে ১০ জনকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল৷এদিকে বিহারি পল্লীতে এখনো চলছে শোকের মাতম৷ শোকার্ত বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর ইঙ্গিতেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷
সোমবার দুপুরে মিরপুর বিহারি ক্যাম্পে আগুনে পোড়া ঘরবাড়ি পরিদর্শন ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা কামাল৷ এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের৷ কালশীর এই নৃশংস ঘটনায় প্রমাণ করে সরকার আটকেপড়া পাকিস্তানিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের ব্যর্থতায় এই ঘটনা ঘটেছে৷ অথচ পুলিশ এবং এই বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই তদন্তের কাজ পরিচালনা করছেন৷ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাই যদি তদন্ত কাজ পরিচালনা করে তাহলে কী ভাবে সঠিক তদন্ত হবে?”
সুলতানা কামাল নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য যেসব পুলিশ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বাদ দিয়ে তদন্ত কাজ পরিচালনার দাবি জানান৷
সুলতানা কামাল বলেন, “এই হতাহতের ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ইন্ধন দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে৷ তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলে তাকেই এর প্রমাণ দিতে হবে৷”
চলছে প্রতিবাদ আর শোক
কালশীতে সংঘর্ষে ও প্রতিপক্ষের দেয়া আগুনে ১০ জন নিহত হওয়ার তিনদিন পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি৷ চলছে শোকের মাতম আর প্রতিবাদ৷ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য৷
সোমবার সরেজমিন বিহারি পল্লিতে গেলে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷ বিক্ষুব্ধরা সড়কও অবরোধ করেন৷
তারা অভিযোগ করেন, “বিহারি ক্যাম্পের জমি দখল ও ইলিয়াস মোল্লার কথায় অপর বস্তিতে বিদ্যুৎ না দেয়ায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে৷”
স্ট্যানডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপেট্রিয়েশন কমিটি - এসজেআরসি-র সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী অভিযোগ করেন, ‘‘শনিবার ভোরে স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লার নির্দেশে পুলিশের সহযোগিতায় পল্লবী থানা যুবলীগের কয়েক নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ড ও লুটপাট চালিয়েছে৷”
আর এসজেআরসি প্রধান আব্দুল জব্বার খান অভিযোগ করেন, ‘কী ভাবে বিহারিদের উচ্ছেদ করা যায় তার ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই করা হচ্ছে৷ এটি তার একটি নমুনা মাত্র৷ বিহারীদের উচ্ছেদ করে জমি দখল করা হচ্ছে প্রধান টার্গেট৷”
এদিকে ওয়েলফেয়ার মিশন অব বিহারিজ-এর সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, “বিহারিদের উৎখাত করতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই হামলা চালানো হয়েছে৷ আর এতে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পূর্ণ সহযোগিতা করেছে পুলিশ৷ এই হত্যার জন্য শুধু ইলিয়াস মোল্লাহ নয়, এর জন্য পুলিশও দায়ী৷”
এই ঘটনায় মোট ছয়টি মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে তিন হাজার৷ আর গ্রেফতার করা হয়েছে সাতজনকে৷ তবে গ্রেফতারকৃত সাতজনই বিহারি৷
তবে বিহারি ক্যাম্পের ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার মঈনুল হাসান৷ স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বিহারী পল্লির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে৷ তদন্তে কারো নাম পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷”
তবে চেষ্টা করেও এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর বক্তব্য জানা যায়নি৷ সূত্র: ডিডব্লিউ
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৮:৫৫ ৪৩৫ বার পঠিত