কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ রাজধানীর পল্লবী এলাকার কালশীতে বিহারী ক্যাম্পে শনিবার ১০ জন নিহতের ঘটনায় রোববার ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নয়জনের নামসহ অজ্ঞাত অনেককে আসামি করা হয়েছে। থানায় আটক থাকা সাতজনকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার আদালতে হাজির করা হয়েছে।
পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুনিরা আক্তার জানান, ভাঙচুর, লুটপাট ও হত্যার অভিযোগে ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টির বাদী পুলিশ। অন্য মামলাগুলো করেছেন স্থানীয় লোকজন।
মামলায় নয়জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে মুনিরা বলেন, “এদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী কেউ আছেন কিনা জানি না। তাদের মধ্যে সাতজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।”
পল্লবীর কালশীতে কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে শনিবার ভোরে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের নয়জন মারা গেছেন। এ নিয়ে বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশ ও আশপাশের যুবকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে একজন তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হচ্ছেন ক্যাম্পের বাসিন্দা ইয়াছিন আলীর স্ত্রী বেবি আক্তার (৪০), তাদের যমজ সন্তান লালু হোসেন ও ভুলু হোসেন (১৪), তিন মেয়ে শাহানা আক্তার (২৪), রোকসানা বেগম (১৮), আফসানা আক্তার (২০), ছেলে আশিক (২৫) ও আশিকের স্ত্রী শিখা(১৮) এবং ইয়াছিনের নাতি দুই বছর বয়সী মারুফ। আর ১৮ বছর বয়সী আজাদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে বলে স্বজনদের অভিযোগ। যদিও পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সবার লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ’র কথামতো নিউ কুর্মিটোলা ক্যাম্প থেকে পাশের রাজি বস্তিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ না দেয়ায় এমপির নির্দেশে যুবলীগের কর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। নেতৃত্বে ছিলেন ৫নং ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি জুয়েল রানা। তারা পুলিশের সামনে অগ্নিসংযোগও করেছেন।
তবে পুলিশের দাবি, তাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেনি। বিহারি ক্যাম্পে আতশবাজি পোড়ানো ও ফোটানো নিয়ে প্রথমে বিহারি ক্যাম্পের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ পরে আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তাদের সঙ্গেও ক্যাম্পবাসীর সংঘর্ষ বেধে যায়।
ইলিয়াস মোল্লাহ’র দাবি, “বিদ্যুতের ঘটনার সঙ্গে শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আতশবাজির কারণে হয়েছে। কেউ একটি পটকা মারলে অন্যপক্ষ দুইটি মারে। কেউ দুইটি মারলে চারটি মারে। আর এ কারণে পুলিশও এটি বন্ধ করতে পারেনি।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে তদন্ত কমিটি
পল্লবীর কালশীর সংঘর্ষ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় তারা কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হতাহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ ব্যাপারে মিরপুর জোনের উপ কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, শনিবার কালশীর বিহারি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অপরাধ মীর রেজাউল আলমের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি রোববার দুপুরে বিহারী ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে কালশীসহ মিরপুরের বিভিন্ন বিহারি ক্যাম্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আট প্লাটুন করে তিন শিফটে নিরপাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জলকামান, এপিসিসহ সার্বক্ষণিক আট প্লাটুন করে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
বিহারিদের সড়ক অবরোধের চেষ্টা
কালশী বিহারী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করেছে বিহারিরা। তবে পুলিশি বাধায় তা করতে পারেনি।রোববার সকাল ১১টায় বিহারী ক্যাম্পের সামনে কালশী নতুন রাস্তা দখল করে সেখানে বসে পড়েন তারা। পরে পুলিশ এসে তাদের উঠিয়ে দেয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৩:২৯ ৩৯৩ বার পঠিত