(খোকন) বঙ্গনিউজ: অনেক সংশয় ছিল ব্রাজিল বিশ্বকাপ নিয়ে, বাধা-বিপত্তিও এসেছে অনেক। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ফুটবল-রোমাঞ্চপ্রিয়দের আরাধনার কাছে যেন দূর হয়েছে সব। অবশেষে দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে একমাসের এই মহাযজ্ঞ। বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটির কর্তারা সব সময়ই বলে এসেছেন সময় মতো সব আয়োজন পূর্ণ হবে। কিন্তু বিশ্বকাপ বিরোধী আন্দোলন, স্টেডিয়াম নির্মাণে বারবার ফিফার দেয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়া, অবকাঠামোগত অন্য আরো অনেক শর্ত পূরণ না হওয়া - এসব সংশয়ের সুচ ফুটিয়েছে একের পর এক।
ব্রাজিল সরকার আর বিশ্বকাপ আয়োজকদের প্রতিশ্রতির অনেক অবকাঠামো ও প্রকল্প শেষে আর আলোর মুখ দেখেনি। শেষে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা আয়োজকদের বলেছে, আর কিছু না হোক, স্টেডিয়ামগুলো উদ্বোধনী ম্যাচের আগে শেষ হলেই চলবে।
শেষ পর্যন্ত উদ্বোধনী ম্যাচের শহর সাও পাওলোতে মেট্রোকর্মী আন্দোলন মিইয়ে গেছে। বেতন বাড়ানো ও সহকর্মীদের উপর মামলা উঠিয়ে নেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবারও ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছিল তারা। তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর স্থগিত হয়েছে তা। ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় শহরের বিশ্বকাপের ভেন্যু আরেনা দে সাও পাওলো স্টেডিয়ামে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া উদ্বোধনী ম্যাচটি দেখতে যেতে আর কোনো সমস্যাই রইল না সমর্থকদের।
স্টেডিয়াম নিয়ে শঙ্কার যে মেঘ সরে গেছে। পেলের ভাষায় ‘সুন্দর ফুটবল’-এর দেশ ব্রাজিলে পাপড়ি মেলে ধরছে বিশ্বকাপের শোভা।
সংশয়ের মেঘ কেটে যাওয়ার পর ব্রাজিলের আকাশে ধরা পড়ছে নানান রঙের স্বপ্ন। ছোট থেকে বড়-স্বপ্ন দেখছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ৩২টি দলই। কারও ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন, কারও আবার নিজের আলোয় বিশ্বকাপকে রাঙিয়ে দেয়ার স্বপ্ন।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে স্বাগতিকদের ৬৪ বছর তাড়িয়ে বেড়ানো একটি দু:খ ভোলার অভিযান।
১৯৫০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্নের সমাধি হয়েছিল ব্রাজিলের। এর পর আবার আঙিনায় বিশ্বকাপ এসেছে, মারাকানার সেই দু:খ ভুলতে চায় তারা। জিততে চায় বিশ্বকাপে ষষ্ঠ শিরোপা। তাদের এই স্বপ্নের সারথি নেইমার। ২২ বছরের এই তরুণকে সওয়ার করেই সাড়ে ৬৪ বছরের যন্ত্রণা ভুলতে চায় ব্রাজিল।
স্কলারি-নেইমারদের ‘হেক্সা’ জয়ের অভিযান শুরুর আগেই বিশ্ববাসীর সাক্ষাৎ ঘটবে ব্রাজিলের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে। প্রকৃতি, মানুষ আর ফুটবলের মাঝের বন্ধনকেই ২৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুটিয়ে ধরা হবে।
লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ-অঙ্কটা একটু ভিন্ন। আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে ব্রাজিলে পা রেখেছেন মেসি। আর্জেন্টিনার এই ‘ছোট্ট জাদুকর’-এর ব্যক্তিগত একটি স্বপ্নও আছে।
বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের ট্রফি-কেসে শোভা পাচ্ছে অনেক সাফল্য-স্মারক। ক্লাব ফুটবলের প্রায় সব শিরোপাই জেতা হয়েছে তার। ব্যক্তিগত অর্জনের ডালাটাও তার কানায় কানায় পূর্ণ। সাফল্যের মুকুটে শুধু নেই সর্বশ্রেষ্ঠ পালক-বিশ্বকাপ শিরোপা।
এবার এই শিরোপাটি জিতে স্বদেশি কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা আর ফুটবল সম্রাট পেলেদের কাতারে নাম লেখাতে চান তিনি।
ইউরোপের ফুটবল পরাশক্তিদের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপটা ইতিহাস গড়ার উপলক্ষ। বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের হিসেবে ইউরোপ দক্ষিণ আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে। এ পর্যন্ত হওয়া ১৯টি বিশ্বকাপের ১০টি জিতেছে তারা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো জিতেছে ৯ বার।
তবে লাতিন আমেরিকা থেকে এখনো ইউরোপে শিরোপা নিয়ে যেতে পারেনি তারা। এর আগে লাতিন আমেরিকায় হওয়া চারটি বিশ্বকাপের সবকটিতেই জিতেছে এই অঞ্চলের দলগুলো। এবার এর ব্যতিক্রম ঘটাতে ফেভারিট তকমা নিয়েই ব্রাজিলে পা রেখেছে জার্মানি।
স্পেনের অভিযানটা একটু অন্য রকম। ব্রাজিল জয় করতে পারলে ইতিহাস গড়া তো হবেই, সঙ্গে আরেকটা গৌরবেরও ভাগিদার হবে তারা। ঢুকে যাবে বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখতে পারাদের ছোট্ট তালিকায়। এর আগে বিশ্বকাপ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র দুটি দেশ-ইতালি ও ব্রাজিল।
এত স্বপ্ন, এত আশা; শেষ পর্যন্ত কার স্বপ্ন পূরণ হবে, বিশ্বকাপ কার গলায় জয়মাল্য পড়াবে কিংবা কাকে ভাসাবে প্রাপ্তির আনন্দ-ভেলায়, তা জানা যাবে ১৩ জুলাইয়ের ফাইনালে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসার আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপ এক মাস মাতিয়ে রাখবে পুরো বিশ্বকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৬:৫৮ ৪৪১ বার পঠিত