বঙ্গ-নিউজঃ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার এক মাস আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৩৫তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন,“কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ আগামীতে আর থাকবে না। এ সুযোগ একদম চলে যাবে।” প্রতিবার বাজেট ঘোষণা আগে এই ধরনের কথা বলা হলেও পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়ে আসছে। রাজস্ব আয়ে করের অবদান বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট দিতে যাচ্ছেন টানা দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মুহিত। “বর্তমানে জিডিপিতে ট্যাক্সের অবদান ১৩ শতাংশ। এটা ১০ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে আসতে ২৭ বছর সময় লেগেছে, যা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। আমি এটা আগামী ৫ বছরে আরো ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করার জন্য এনবিআর বলেছি।”
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন,”আন্তর্জাতিক কারণে প্রতিবছর কাস্টমস থেকে রাজস্ব আদায় কমছে। এখন আয়কর থেকেই রাজস্ব আয় করতে হবে। এজন্য আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি, আয়কর দেয়ার জন্য।”
দেশীয় শিল্পের জন্য সুরক্ষানীতি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন,”তবে আমি বলব, যারা এই সুবিধা নেন, তারা যেন যথাযথভাবে ব্যবহার করেন।” এর পাশাপাশি বাণিজ্য উদারীকরণেরও উদ্যোগও নেয়া হবে বলে জানান তিনি। আয়কর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন,”ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর নিয়ে খুব বেশি আশা করা ঠিক হবে না। বর্তমানে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা নির্ধারিত আছে। কিন্তু বাংলাদেশের গড় আয় কত? “আমেরিকায় ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ ৫০ হাজার। এবং সেটা বছর বছর পরিবর্তন করা হয় না। আমরাও সেরকম কিছু করার কথা ভাবছি। এবছর ঠিক করে দেয়া হবে, যেটা দীর্ঘদিন, ন্যূনতম ১০ বছর থাকবে।”
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বাজেটে এনবিআরের জন্য একটি ‘রি ফান্ড’ তহবিল গঠন করা হবে, যাতে অগ্রিম কর যাদের কাছ থেকে নেয়া হয় তা সমন্বয় করা যায়। এছাড়া গাড়ি আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণে বিশেষ নজর দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ করের হার কমিয়ে এর আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতা কাজী আকরাম ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন। এছাড়া তিনি কর্পোরেট কর ক্রমশ কমিয়ে আনার পাশাপাশি সব রপ্তানি খাতেই উৎসে আয়করের হার শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। সেই সাথে কাজী আকরাম সরকারি বন্ধ কলকারখানা চালু করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা, পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডি মিউচ্যুয়ালাইজেশন কার্যকর, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পর্যটকদের জন্য বাস ও গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়ার প্রস্তাবও করেন।
সংবাদপত্রের জন্য কাগজ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি আমদানির ওপর থেকে ৩ শতাংশ ডিউটি ও ভ্যাট প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেন দৈনিক সমকালের মালিক আজাদ। একই সঙ্গে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের ভ্যাট বিল পাওয়ার পরে নেয়ার প্রস্তাব করেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মালিক আজাদ, যা এখন আগে দিতে হয়। দেশের অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক আজাদ পোশাক শিল্পের জন্য অগ্নিনির্বাপক সামগ্রী আনায় শুল্কছাড়ের প্রস্তাবও করেন। পাশাপাশি তিনি পাট শিল্পে ৯ শতাংশে ঋণ ও বিশেষ সুবিধা দেয়ার দাবি জানান।
আজাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, বিশেষ সুবিধায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে এজন্য ফাইল পাঠানো হয়েছে। শিল্পে কর্মপরিবেশ উন্নত করতে প্রি ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং আইটেম আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম। সভায় এফবিসিসিআইয়ের ৭১৭টি প্রস্তাবের পাশাপাশি জেলা চেম্বার ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা আয়কর, মুসক ও শুল্ক ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেন। অনুষ্ঠানে অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৯:২২ ৪০১ বার পঠিত