কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সাত খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই ঘটনার পরপরই যদি অভিযান চালানো হতো, তাহলে হয়তো মানুষগুলোকে জীবিত উদ্ধার করা যেত। যেটি ত্বকীর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। আমরা বারবার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘খুঁজছি’, ‘দেখছি’ ইত্যাদি বলে সময়ক্ষেপণ করল। আমি বলব, এখানে প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। প্রশাসনে যারা আছেন, তারা প্রভাবশালীদের কথায় ওঠাবসা করেন। বিগত ৩০ বছর নারায়ণগঞ্জে এটাই চলে আসছে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রভাবশালী পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করেছেন।”দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আইভী এসব কথা বলেন।
আইভী বলেন, “নারায়ণগঞ্জকে শান্তির শহর বলা যাবে না। অসম্ভব অশান্ত একটি শহরে পরিণত হয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর যখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়, তার পর থেকে ২০১২ সালটা মোটামুটি ভালো ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে ওঠে। এর পর থেকে জেলায় শিশু হত্যা বেড়ে যায়। এ পর্যন্ত জেলায় ২০-২২ জন শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আমি মনে করি, ত্বকী হত্যার বিচার হলে এতগুলো শিশু হত্যার ঘটনা ঘটত না। নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হওয়ার পেছনে ত্বকী হত্যা একটি বড় কারণ। আরও অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ মাদক। পুরো নারায়ণগঞ্জে মাদকের ছড়াছড়ি। প্রশাসনের নাকের ডগায় এখানে মাদক ব্যবসা চলছে।”
তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক। কোর্টে হাজিরা দিতে এসে, আইনের আশ্রয় নিতে এসে কেউ যদি অপহৃত হন এবং লাশ হয়ে ফিরে আসেন, এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে।”
আইভী অভিযোগ করে বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে, মানুষ গুম হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছে না, আসামিদের ধরতে পারছে না। তাতে কি প্রমাণিত হয় না যে তারা ব্যর্থ? আমি বলব, পুরোপুরি না হলেও প্রশাসন ৮০ শতাংশ ব্যর্থ। আবার অনেক সময় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও প্রভাবশালীদের চাপে কিছু করতে পারে না। এখানে অনেক সৎ কর্মকর্তা এলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। বাধা দেওয়া হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জের সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আপনার জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, “আমি তাদের একটি কথাই বলতে চাই, ভীত হবেন না। অপরাধীরা যত ক্ষমতাবান হোক না কেন, একসময় তারা শাস্তি পাবেই। আর নারায়ণগঞ্জের মানুষ তো এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছেন, তারা মাঠে নেমে এসেছেন। এটাই আশার কথা।”
এই অবস্থায় আপনি নিজে কি নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, “আমি আমার জন্য নয়, আমি কর্মীদের ব্যাপারে শঙ্কিত। যারা আমার পক্ষে নির্বাচন করেছেন, তাদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। জেলে পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার এবং তুলে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে শুনেছি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এবং আমার দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান থাকবে, নারায়ণগঞ্জবাসীকে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়া হোক। ব্যক্তিগতভাবে আমি কারও বিরুদ্ধে নই। বৃহস্পতিবার আমাদের দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে কিছু হলেই আমি নাকি শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে কথা বলি। আমি তাঁকে অনুরোধ করব, তিনি যেন নারায়ণগঞ্জে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের কথা শোনেন, বুঝতে চেষ্টা করেন এখানে কী হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “গত এক-দেড় বছরে শামীম ওসমান যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভিডিও ক্লিপগুলো যদি খতিয়ে দেখেন, তাহলেই দেখতে পারবেন, তিনি কী সব ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছেন, মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে কটূক্তি করেছেন, হাসানুল হক ইনু সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, সদ্যপ্রয়াত বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবিএম মূসা সাহেবকে যে গালাগাল করেছেন, তার তুলনায় আমি তো কিছুই না।”
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আইভীর সঙ্গে আছেন দাবি করে তিনি বলেন, “মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা আমার সঙ্গে না থাকলে আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পারতাম না। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে বলে শামীম ওসমান যে অভিযোগ করেছেন, আমি সে ব্যাপারে তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। তিনি একটিও প্রমাণ দিতে পারবেন না। আর আমি জামায়াতের কাউকে তো চিনিই না। এখানে জামায়াত প্রতিষ্ঠিতও নয়। তিনিই বলে বলে জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করছেন।”
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪২:২৫ ৩২৬ বার পঠিত