কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সফটওয়্যারই বলে দেবে কৃষিজমিতে কোন সার কী পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে। এখন অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম (ওএফআর) সফটওয়্যার ব্যবহার করে মাটির পুষ্টিমানের তথ্য, ফসলের পুষ্টি চাহিদা ও সারে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে সার প্রয়োগের নির্দেশিকা পাবেন কৃষকরা।মঙ্গলবার দেশব্যাপী এই ওএফআর সফটওয়্যারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।
সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে জমির অবস্থান (জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন) ভূমি শ্রেণি ও ফসল নির্বাচন করে নির্বাচিত ফসলের জন্য সারের যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় সফটওয়্যারটি আবিষ্কারের সফলতা পাওয়া গেছে।
মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মকবুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মাটির নমুনা পরীক্ষা করে অনলাইনের মাধ্যমে সার প্রয়োগের নির্দেশিকা বিশ্বে মাইলফলক হয়ে থাকবে। কয়েক বছরের গবেষণার ফল এটি। কৃষির উন্নয়নের এই সফটওয়্যারটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন গাইড অনুসারে সার্ভারে রাখা মাটির তথ্য ভাণ্ডার থেকে নির্বাচিত এলাকার মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করে ওই সফটওয়্যার তাৎক্ষণিকভাবে সারের সুপারিশ বা নির্দেশিকা দেবে। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সেবা কার্যক্রম কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সবাইকে জানানো।
কৃষকেরা সরাসরি www.frs-bd.com অথবা ww.srdi.gov.bd ওয়েবসাইটের OFRS সংযোগে গিয়ে স্থান ও ফসল নির্বাচন করে এই সেবা পেতে পারেন। এছাড়া ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র, বেসরকারি টেলিকম সংস্থা ৭৬৭৬ নম্বরে ফোন করে অথবা গ্রামীণফোনের সিআইসি থেকেও এই সেবা পাওয়া যাবে।
মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে কৃষকের কাছে সার সুপারিশ সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ৩০টি উপজেলায় এর কার্যক্রম চালু করা হয়। ওই সময় গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক টেলিকম সংস্থার সহযোগিতায় মোবাইল ফোন ও সিআইসি’র মাধ্যমে এই সেবা কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি তথ্য সেবাকেন্দ্র তাদের সেবা বিতরণ প্রক্রিয়ায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে এ সেবা প্রদান শুরু করে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কাজটির সাথে সম্পৃক্ত হয়। সবশেষে ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) এই সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। ২০১১ সালে এই সেবা কার্যক্রম ২০০টি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয়।
সফটওয়্যারটি ব্যবহারের উপকারিতা হিসেবে গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে ফসল ভেদে শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফলন বাড়বে, গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ফলে রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ কম হবে, উৎপাদন খরচ কমবে, মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এছাড়া উৎপাদিত ফসলের মানও ভালো হয়।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. তইবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকরা তাদের জমির ঠিকানা ও ওই জমিতে কেমন পানি ওঠে এটুকুই বলেই সঙ্গে সঙ্গে সারের নির্দেশিকা পেয়ে যাবেন। এটা খুবই ইতিবাচক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ কৃষক এখনো জানেন না কোন মাটিতে কী সার কত পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে। এতে একদিকে যেমন মাটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না অপরদিকে কৃষকেরাও ভালো ফল পাচ্ছেন না। তাই সেবাটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই কৃষির জন্য একটি ভালো বার্তা বয়ে আনতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৭:১৫ ৪০২ বার পঠিত