ডেস্করিপোর্টঃডালিম শুধুমাত্র একটি মাজাদার ফল নয়, বরং মানব শরীর গঠন ও সুরক্ষায় ডালিমের রয়েছে বহুমুখি ওষুধি গুণ। এতদিন আমরা ডালিমের স্বাদ নিয়েছি, কিন্তু পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত পুরো ডালিম গাছিটিই যে মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। অথচ উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় ডালিম গাছের নানা ভেষজ গুণের কথা বলা হয়েছে। ডালিম নিয়ে নানা গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই এদেশে এলোপ্যাথির ব্যাপক প্রসার শুরু। পাশাপাশি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে হোমিওপ্যাথিও দিন দিন প্রসার ঘটছে। কিন্তু এমন একটা সময় ছিল, এদেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা বলতে বুঝতেন ইউনানী এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসা। গাছপালা, লতা-পাতা অর্থাৎ প্রাকৃতীক বিভিন্ন উপাদানই ইউনানী এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূল উৎস। এখনো দেশের প্রত্যন্ত ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতীক উপাদান নিভর্র চিকিৎসার উপর নিভর্র করে থাকেন। প্রকৃতীর সৃষ্টি ডালিম গাছ মানুষের বহুরকম জটিল ও কঠিন রোগের আরোগ্য বিধানে সক্ষম। নিম্নে তার কয়েকটির বিবরণ তুলে ধরা হল।
রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত কার্যকরী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের কোন অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে গেলে বা কেঁটে রক্তপাত হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভাল কাজ করে।
হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্ত ঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়। আঘাত, পলিপ বা কোন কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভল ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভাল।
ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোন স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভাল কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।
গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোন কোন মহিলার একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশংকা দূর হয়।
ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমি নাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগেন। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ডালিম গাছ- ফল, ফলের খোসা, পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কোনটাই ফেলনা নয়। আগাগোড়া মানুষের উপাকরী। ডালিম গাছের চাষ কোন কঠিন কাজ নয়, এর জন্য বেশি পরিশ্রম এবং অধিক যতœও প্রয়োজন হয় না। যে কোন রকম মাটিতেই ডালিমের চাষ হয়। এর জন্য বড় জায়গাও লাগে না। ঘরের আঙ্গিনা এমনকি বাড়ির ছাদেও সহজে ডালিমের চাষ করা যায়। ঘরে একটি ডালিম গাছ থাকা মানে ওষুধের একটি ফ্যাক্টরি থাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪১:৫১ ১৭৫০ বার পঠিত