বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃতিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এক লংমার্চে পানিপ্রবাহ বেড়ে তিন হাজার ছয় কিউসেক হয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় আমাদের ১০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। ন্যায্য হিস্যার পানি না পেলে ভবিষ্যতে আমরা আরো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
নীলফামারীর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজের পাশে গতকাল বুধবার স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তিস্তায় আমাদের ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব তখনই সুদৃঢ় হবে যখন তিস্তায় এই পরিমাণ পানি আসতে থাকবে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান নতজানু সরকার কখনোই তিস্তা পানিচুক্তি করতে পারবে না। কারণ তারা তাদের (ভারত) অখুশি করতে চায় না।’
এর আগে সকাল ১০টায় রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরির পথসভা থেকে লংমার্চের বিশাল গাড়িবহর ডালিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। ৯৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে দুপুর ১২টার দিকে লংমার্চ তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় এসে পৌঁছায়। মির্জা ফখরুল ডালিয়ার কাছ থেকে হেঁটে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে তিস্তা ব্যারাজের সামনে হেলিপ্যাড মাঠে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। এ সময় নেতা-কর্মীরা করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানায়।
প্রখর রোদের মধ্যে নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলার হাজার হাজার নেতা-কর্মী গতকাল সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হয়। হেলিপ্যাড মাঠে আয়োজিত সমাবেশে নেতা-কর্মীরা ‘তিস্তা নদীর পানি দে, নইলে গদি ছেড়ে দেয়’, বাঁচতে হলে জিততে হবে’, ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’ ইতাদি স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা সরব করে রাখে। সমাবেশে কয়েকজন নারী শিল্পী তিস্তাকে নিয়ে ভাওয়াইয়া গান গেয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন। সমাবেশে তিস্তা পাড়ের হতদরিদ্র কৃষক আসিম উদ্দিন তিস্তায় পানির অভাবে তাঁর দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য দেন।
দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুই দিনের লংমার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি হয়। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা থেকে তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে বিএনপি। দুই দিনে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী এবং রংপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য দেন নেতারা।
লংমার্চ শেষে ডালিয়ার জনসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা লংমার্চে এসেছি। নেত্রীর এক কর্মসূচিতে তিস্তায় তিন হাজার ৬ কিউসেক পানি বেড়ে গেছে। আল-হামদুলিল্লাহ। এটা আমাদের কর্মসূচির প্রাথমিক সফলতা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিস্তা অভিমুখে এই লংমার্চ ভারত সরকার ও সে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে নয়। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্দোলন করছি। আমাদের দেশ ছোট হতে পারে। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের পদানত করতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারকে নতজানু ও অবৈধ সরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কখনো তিস্তার পানিচুক্তি করতে পারবে না। কারণ এই সরকারের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আর যাদের শক্তিতে তারা ক্ষমতায় আছে, তাদের তারা (সরকার) অখুশি করতে চায় না। এ জন্য সব সময় এই সরকার নতজানু নীতিতে অটল রয়েছে।
দীর্ঘ বক্তব্যে তিস্তার পানির অভাবে উত্তরের বিশাল এলাকাজুড়ে মরুকরণ, ফসলের ক্ষতি, পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। লংমার্চ সফল করতে সহায়তা করায় দলীয় নেতা-কর্মীসহ গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু। সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহানগরের আবদুস সালাম, যুবদলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে রংপুরের মুজাফফর হোসেন, নীলফামারীর লুৎফর রহমান মিন্টু, আনিসুর আরেফিন চৌধুরী, লালমনিরহাটের হাফিজুর রহমান বাবলা প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমেনি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটির মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শামীমুর রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নুরী আরা সাফা, হুমায়ুন ইসলাম খান, আবুল কালাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, এম মালেক, হাফেজ আবদুল মালেক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, মনির হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতানা সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, সুলতানুল হক নম্র চৌধুরী, ভিপি সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন চান, কামরুল মুনির, শফিউল হক মিলন, কাজী সাইদুল আলম বাবুল, শামসুল আলম তোফা, সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, হারুনুর রশীদ, নাজিম উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৩:১৫ ৫২৭ বার পঠিত