ডেস্করিপোর্টঃতাবদাহে অতিষ্ঠ দেশবাসীর জন্য কোনো সুখবর নেই। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা) স্থায়ী হতে পারে চলতি সপ্তাহের শেষ কিংবা আগামী সপ্তাহের মধ্যভাগ পর্যন্ত। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে এ তথ্যই পাওয়া গেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী দুই-তিন দিনে বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।মঙ্গলবার ছিল এ পর্যন্ত বছরের উষ্ণতম দিন। রাঙ্গামাটিতে এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর তাপমাত্রাও ছিল বছরের সবচেয়ে বেশি (৩৯ ডিগ্রি)। রাজধানীতে এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে ২০০৯-এ ২৭ এপ্রিলে (৩৯.৬ ডিগ্রি)। আজ রাজধানীসহ সারা দেশের তাপমাত্রা মঙ্গলবারের চেয়েও বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
গরমে সারা দেশে বেড়ে গেছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার হার। মঙ্গলবার রাজধানীতে একজন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। হরদম লোডশেডিং গরমের যন্ত্রণাকে বাড়িয়ে চলেছে ব্যস্তানুপাতিক হারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, এপ্রিল মাস বাংলাদেশের সবচেয়ে গরম মাস। এ মাসে সূর্য দেশের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকে এবং দিনও থাকে বড়। এ বছর আরও যোগ হয়েছে বৃষ্টি না হওয়াজনিত সংকট। যে কারণে তাপমাত্রা উত্তরোত্তর বাড়ছে। আগামী দুই-তিন দিনে এ তাপমাত্রা কমার লক্ষণ প্রায় নেই। কেননা আগামী দুই-তিন দিনে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রায় নেই। আর বৃষ্টিপাত না হলে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে রাজধানী বা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস : কানাডার আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা দি ওয়েদার নেটওয়ার্কের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ (বুধবার) রাজধানীর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলতে পারে। তারপর এক-দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা কমবে। তবে আগামী সোমবারের আগে রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিবিসি ওয়েদারের পূর্বাভাস অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকার তাপমাত্রা কমার কোনো লক্ষণ নেই। শনিবার বিকাল ও সন্ধ্যায় ঢাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়েদার ফোরকাস্ট ডটকমের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার রাজধানীর তাপমাত্রা চলতি সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি হওয়ার শংকা রয়েছে। এ সপ্তাহে রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।
চিকিৎসকদের পরামর্শ : বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে বয়স্ক মানুষ, দুগ্ধপোষ্য শিশু, কিশোর-কিশোরী, শ্বাসকষ্টের রোগী, দীর্ঘ সময় রোদে কাজ করে এমন পেশাজীবী যেমন কৃষক, রিকশাওয়ালা, নির্মাণ শ্রমিক ইত্যাদি এবং পথশিশু ও ভবঘুরেসহ যারা রাস্তায় থাকে তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গরম মোকাবেলায় দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং সম্ভব হলে দিনে দুই-এক প্যাকেট স্যালাইন এবং দুই-এক গ্লাস গ্লুকোজ খেতে হবে। প্রচুর পানিযুক্ত ফল যেমন তরমুজ, পেঁপে, বাঙ্গি, আনারস ইত্যাদি খেতে হবে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডযুক্ত পানীয় যেমন কোকো-কোলা, পেপসি ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস : বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ২ এপ্রিলের বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠকে বলা হয়, এপ্রিল মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই-তিন দিন বজ্র সহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্র ঝড় এবং দেশের অন্যত্র তিন-চার দিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্র ঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র দুই-তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি) বা মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
রাজধানীতে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু : মুগদায় হিটস্ট্রোকে মঙ্গলবার মনতাজ উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি মানিকনগরের ৪৩৩/১, নম্বর বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। বেলা ১১টার ফুলগাছে পানি দেয়ার জন্য ছাদে উঠার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। বাড়ির ভাড়াটিয়ারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে মনতাজ উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার চরিতাবাড়ি গ্রামে। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া রাকিব উদ্দিন জানান, বাড়ির সপ্তম তলার ছাদের উপরে থাকা ফুলগাছে মনতাজ সকাল-বিকাল পানি দিতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১৩:১৭ ৪৩৭ বার পঠিত