ডেস্করিপোর্টঃচোরাই সোনা নিলামের তাগাদা দিয়ে চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বৃহস্পতিবার এনবিআরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয়, আটক সোনা নিলামে আইনি বাধা থাকলে তা এনবিআরের শুল্ক শাখার উদ্যোগে দূর করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকা চোরাচালানকালে আটক সোনা বিক্রি হলে এনবিআরের রাজস্ব খাতে আদায় হবে ৫৭৭ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্র জানায়, আলোচনাকালে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে আটক সোনা বাবদ কত টাকা আদায় হবে সে হিসাব জানান। এ সময় আরো আইনি কী বাধা আছে এবং কিভাবে এসব বাধা দূর করা যাবে তাও আলোচনা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ সোনা নিলামে বিক্রি করে। এরপর চলতি বছরের মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকা শাখায় ৯২৮.৩৭৪ কেজি এবং চট্টগ্রাম শাখায় ২৫০ কেজি চোরাই সোনা জমা হয়। কিন্তু গত প্রায় ছয় বছরে এসব সোনা বিক্রিতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রাজস্ব খাতে কোনো অর্থ এনবিআরের কোষাগারে জমা হয়নি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, বহনকারীর সন্দেহজনক আচরণে বা নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশিতে সাধারণত চোরাই সোনা আটক হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও হয় অনেক সময়। জব্দ করা সোনা যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা কাস্টমস হাউস এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে জমা রাখা হয়। এরপর পুলিশ পাহারায় তা এক থেকে সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকা শাখায় ৯২৮.৩৭৪ কেজির মধ্যে ২৫৮.৮৬৭ কেজি সোনা জব্দ করার সময় কোনো ব্যক্তিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কোনো মামলাও হয়নি। বাকি সোনা আটকের সময় সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন সন্দেহে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছে।
আটক সোনার কোনো দাবিদার না থাকলে এবং এ বিষয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলে এতে কোনো মামলা হয় না। এসব সোনা স্থায়ী সোনা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা হয়। যেকোনো সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিলামে তুলতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকা শাখায় স্থায়ী সোনার পরিমাণ ৯২৮.৩৭৪ কেজির মধ্যে ২৫৮.৮৬৭ কেজি। বাকি সোনা-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হলে তা নিলামে তুলতে আইনি বাধা রয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, সোনা আটককালে যেসব মামলা হয়েছে তার ৯৯ ভাগ আটক ব্যক্তিই এখন আইনের কোনো না কোনো ফাঁক গলে মুক্ত। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত ২০০৮ সাল থেকে চোরাই সোনার এক ছটাকেরও দাবিদার হিসেবে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া দু-একজন বহনকারী ধরা পড়লেও প্রকৃত মালিক একজনও আটক হয়নি। তাই অহেতুক মামলাগুলো ঝুলিয়ে রাখায় সোনা নিলাম-সংক্রান্ত বিষয়টি বিলম্ব হচ্ছে। এসব মামলা অতিসত্বর নিষ্পত্তি করে সব আটক সোনা নিলাম বিক্রিতে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গত প্রায় এক বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে এনবিআর। ইতিমধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরও চলতি অর্থবছরে বড় অঙ্কের ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ঘাটতি কমাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জোর উদ্যোগ নিতে এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি-বেসরকারি যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে রাজস্ব পাওনা রয়েছে তা আদায়ে এনবিআর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চোরাচালান আটকে এনবিআর জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। গত প্রায় এক বছর থেকে রেকর্ড পরিমাণ সোনা আটকে সক্ষম হয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এসব চোরাই সোনা ব্যাংকে জমা না রেখে নিলামে বিক্রি করা হলে এনবিআর বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে। চোরাই সোনা বিক্রিতে আইনি বাধা থাকলে তা দূর করতেও এনবিআর উদ্যোগ নেবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:৪৬ ৩৬৬ বার পঠিত