বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সাভারে ভবন ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯১ জনে দাঁড়িয়েছে। ধসের ৪৮ ঘণ্টা পরও জীবিত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকজনকে।সাভার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ উদ্ধারের পর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে মরদেহ।
পুলিশের সিনিয়র সহকারী সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা ঘটনাস্থলে জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার করা ২৯১ জনের লাশের মধ্যে ২৩৯ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর নষ্ট হতে শুরু করায় ৪২ জনের লাশ পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
সাভার বাসস্ট্যান্ড ও অধরচন্দ্র বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বাতাস ভারী হয়ে আছে লাশের গন্ধে। এরই মধ্যে স্বজনের খোঁজে ছবি হাতে অপেক্ষায় রয়েছে বহু মানুষ।স্কুলের ফটকে সাদা কাগজে পরিচয় লিখে প্রিয়জনের সন্ধান চাইছেন অনেকে।
উদ্ধারকারীরা বলছেন,শনিবার রাত পর্যন্ত ৩৭২ জনের সন্ধান না পাওয়ার কথা জানিয়েছে স্বজনরা। আর এ পর্যন্ত রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে।
জীবিতদের উদ্ধারে আগামী শনিবার সকাল পর্যন্ত ধ্বংসাস্তূপে তল্লাশি চলবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জাহিদুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা ভবনের নিচের দিকের বিভিন্ন তলায় পৌঁছে গেছেন।
“আমরা এখনো জীবিত মানুষ পাচ্ছি। ৭২ ঘণ্টা (ভবন ধসের পর থেকে) পর্যন্ত জীবিতদের সন্ধান করবো আমরা।”
এরপর ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনের ধ্বংসাস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে সেখানে।
উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী বলেন, যারা আটকে পড়েছেন তাদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। একটি লাশও ধ্বংসস্তূপের ভেতরে থাকবে না।
৫৬ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা নয়তলা ভবন রানা প্লাজা বুধবার সকালে ধসে পড়ে। এতে দোতলা পর্যন্ত দোকান ছিল। ওপরে ছিল পাঁচটি কারখানা।
আগের দিন ওই ভবনে ফাটল দেখা দিলে শিল্প পুলিশ ভবনে কাজ বন্ধ করতে বললেও বুধবার সকালে কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের কারখানায় ঢুকতে বাধ্য করা হয়।
ধসের সময় ভবনটিতে তিন হাজারের বেশি মানুষ ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
নয় তলা ওই ভবন ধসে এখন তিন তলার উচ্চতা নিয়ে আছে। একটি তলার সঙ্গে একটি তলা মিশে গেছে। এর মধ্যেই উদ্ধার কার্যক্রম চালছে।
ধসের পরপরই স্থানীয়দের উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সমন্বিত উদ্ধার কাজে নামে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব।
ভয়াবহ এই ধস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দেয়া বিবৃতিতে বলেছেন, এই বিপুল প্রাণহানির জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।
ভবন ধসে এই বিপুল প্রাণহানির জন্য সরকারের অবহেলাকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার ধ্বংসস্তূপে যান। হাসপাতালে গিয়ে আহতদেরও দেখে আসেন তিনি।
ভবন ধসে শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনায় শ্রম আদালতে বৃহস্পতিবার পাঁচটি মামলা হয়েছে।
এতে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ গার্মেন্ট মালিকদের আসামি করা হয়েছে বলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান জানিয়েছেন। পাঁচটি গার্মেন্টের সদস্যপদ স্থগিত করেছে বিজিএমইএ।
ভবন মালিক ও গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে এর আগে পুলিশ ও রাজউক বুধবার রাতে দুটি মামলা করে।
তবে ভবন মালিক যুবলীগ নেতা রানাকে ২৪ ঘণ্টায়ও খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ, যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে ভবন ধসের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ বের করে আনেন রানাকে, তারপর থেকে আত্মগোপনে তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৬:৫৯ ৪৩৭ বার পঠিত