বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃবিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে হরতাল অবরোধে শাহবাগ ও রমনা থানায় দায়েরকৃত পৃথক তিনটি হত্যা মামলার মধ্যে রমনা থানার একটি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মহানগর হাকিম রেজাউল করিম। শুনানি শেষে বিচারক রমনা থানায় দায়ের হওয়া ট্রাফিক কনস্টেবল ইব্রাহিম খলিল হত্যা মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে শাহবাগ ও রমনা থানায় অপর দুটি মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করা হয়েছে। পরবর্তী ধার্য তারিখ ১২ মে পর্যন্ত জামিন বহাল তাকবে বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে। তবে শাহবাগ ও রমনা থানার অপর দুইটি হত্যা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন।
বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন- অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, অ্যাডভোকেট মোসলেহ উদ্দিন জসিম, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। গত ২৫ মার্চ এসব মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন মির্জা ফখরুলের পক্ষে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
এর আগে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশকে মারধরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রিমান্ড ও জামিন উভয় আবেদনই নামঞ্জুর করেছিল আদালত।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, ঘটনার এক মাস সাত দিন পর এ মামলায় মির্জা ফখরুলকে সন্ধিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধিগ্ধ কোনো আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করা যায় না। এ সময় উচ্চ আদালতের একটি নজিরও বিচারকের সামনে উপস্থাপন করে তাঁরা বলেন, মির্জা ফখরুলের বয়স ৬২ বছর। তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। ইতিপূর্বে আরো চারটি মামলায় তাঁর রিমান্ড আবেদন নাকচ করেছেন আদালত।
জামিনের আবেদন শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম দল বিএনপির দ্বিতীয় নেতা তিনি। গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। এ মামলায় হত্যাচেষ্টার ধারাটি ছাড়া আর সব ধারা জামিনযোগ্য। আর মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে এ মর্মে কোনো অভিযোগও নেই। তাই তাঁকে রিমান্ডের আবেদন বাতিল করে জামিন দেওয়া হোক।
অন্যদিকে জামিনের বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর পিপি আবদুুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার বলেন, ৯ ডিসেম্বর অবরোধের আগে ৬ ডিসেম্বর তিনি এক জনসভায় জনগণকে রাস্তায় গাড়ি বের না করতে হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর হুকুমেই অবরোধে রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি এমন বক্তব্য না দিলে হয়তো এসব ঘটনা ঘটত না। সেদিন কোন কোন আসামি ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তা জানতেই তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
কলাবাগান থানায় করা মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দেবরাজ চক্রবর্তী ফখরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চান। ওই দিন এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন অন্য একটি আদালত। একই দিন একই অভিযোগে দায়ের করা পল্টন থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই থানার উপপরিদর্শক খোরশেদ আলী ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পল্টন ও শেরেবাংলা নগর থানার পৃথক দুই মামলায় ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দুটি মামলায় গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। পরের দিন ৩ ডিসেম্বর মতিঝিল এবং সূত্রাপুর থানার আরো দুই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ দুটি মামলার মধ্যে সূত্রাপুর থানার মামলায় গত ১৫ জানুয়ারি মহানগর দায়রা জজ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে মতিঝিল থানার অন্য মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন। এর পরই কলাবাগান ও পল্টন থানার মামলা দুটিতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফখরুলকে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় তাঁর রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এ ছয়টি মামলা ছাড়াও গত বছর এপ্রিলে বিএনপির হরতালের সময় সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে তেজগাঁও থানার একটিসহ মোট দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত বছর ১৬ মে এ মামলায় তাঁকে কারাগারে যেতে হয়। এক মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা করা হয়। সব মামলায়ই ফখরুলকে আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৯:২৫ ৪৮০ বার পঠিত