ডেস্করিপোর্টঃর্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের এক দশক পূর্তি হচ্ছে বুধবার। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২৬ মার্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব উদযাপন করছে দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
২০০৪ সালের এই দিনে স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে র্যাব জনসাধারণের সামনে আত্মপ্রকাশ করে। অপারেশন দায়িত্ব পায় ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল। রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের সম্মুখে আসে। আর ঐ বছরের ৩০ জুন রাজধানীর উত্তরায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ক্রসফায়ারে নিহতের মধ্যদিয়ে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন কার্যক্রম শুরু করে।
এই দশ বছরে র্যাবের সাফল্য নিয়ে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে সরকারের এই বাহিনী।
কার্যক্রম শুরুর সময় ব্যাটালিয়ন ছিল সদর দফতরসহ ৭টি। লোকবল ৫ হাজার ৫২১ জন। প্রয়োজনের তাগিদে বেড়েছে র্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাইকৃত চৌকস কর্মকর্তা ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এখন ১৪টি ব্যাটালিয়নে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার র্যাব সদস্য কর্মরত রয়েছেন।
র্যাবের হিসাব অনুযায়ী গত দশ বছরে সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ২শ’ ১২ জনকে তারা গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৪ জন জামায়াতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) ও হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। অভিযানে গত এক দশকে ৮ হাজার ২শ’৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার, ১১ হাজার ১৬টি অস্ত্র, ৯২ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ, সাড়ে ৭ হাজার ককটেল, বোমা, গ্রেনেড এবং ৫,২৮০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে র্যাব।
র্যাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০৪ সালে ৫৪ জন, ২০০৫ সালে ১০৬ জন, ২০০৬ সালে ১০৯ জন, ২০০৭ সালে ৮১ জন, ২০০৮ সালে ৬৩ জন, ২০০৯ সালে ৩৮ জন, ২০১০ সালে ৪২ জন, ২০১১ সালে ২৩ জন, ২০১২ সালে ৪৫ জন, ২০০১৩ সালে ৩৫ জন ক্রসফায়ার, লাইন অব ফায়ার এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। নিহতদের বেশিরভাগই হলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের সদস্য, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী ও সুন্দরবনের জলদস্যু।
র্যাব প্রতিষ্ঠার এই দশ বছরে র্যাবের অনেক আলোচিত ঘটনা রয়েছে। জেএমবির শীর্ষ নেতা ১৭ আগস্ট সারাদেশ ব্যাপী বোমা হামালার মূল পরিকল্পনাকারী শায়খ আব্দুর রহমান, জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, হরকাতুল জিহাদের মুফতি আব্দুল হান্নানসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর সদস্যদের গ্রেফতার করে। চট্টগ্রামে ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীনের কঙ্গাল উদ্ধার এবং এর রহস্য উন্মোচন করার বিষয়টি অনেক আলোচিত।
ঢাকা ও ঝিনাইদহে দেশের আলোচিত চরমপন্থী নেতা মোফাখখারুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদ ওরফে তপর মালিথা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। র্যাবের কার্যক্রম শুরুর পর ২০০৪ সালের ৩০ জুন ঢাকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনাটি ছিল ঐ বছর সবচেয়ে আলোচিত।
২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকার গুলশানে ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদা ও ছয় ধনীর দুলালকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর সারাদেশে তরুন সমাজ যে ইয়াবায় আসক্ত সে বিষয়টি ধরা পড়ে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর পরাগ মন্ডল অপহরণ মামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের টাকা লুটের প্রধান আসামী গ্রেফতার ও ১৬ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি ছিল এ বছর সবচেয়ে আলোচিত। এসব সাফল্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বুধবার র্যাব সদর দফতরে দরবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে র্যাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে র্যাব মহাপরিচালক বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৩:২৬ ৪০৩ বার পঠিত