রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃ মাথার ওপরে স্বাধীনতা দিবসের সূর্য, জাতীয় প্যারেড ময়দানে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, তাদের মাঝে উপস্থিত খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সবার কণ্ঠে এক সুর- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এভাবেই লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দাবি তুলল বাংলাদেশ।২০১৩ সালের ৬ মে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে নিয়েছিল সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার (ভারত)। ওই আয়োজনে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আয়োজনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি।
কেবল মাঠেই নয়, প্যরেড গ্রাউন্ডের বাইরে এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে যেখানে ছিলেন, সবাই দাঁড়িয়ে শামিল হয়েছেন এই আয়োজনে, কণ্ঠ মিলিয়েছেন সানার বাংলায়।
সকাল সাড়ে ৬টায় প্যারেড মাঠের ফটক খুলে দেয়ার আগেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পায়ে হেঁটে এসে বাইরে জড়ো হতে থাকা নানা বয়সী নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পোশাক ও পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতের কর্মীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্যারেড মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলাতে।
সকাল সাড়ে ১০টায় গাড়ি থেকে নেমে পতাকা হাতে মাঠের ৯ সেক্টরের উত্তর দিকে নির্ধারিত মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকেই জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী যখন উপস্থিত হলেন- তখন মাঠে হাজির ২ লাখ ৩১ হাজার নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী। ১০টা ৫৫ মিনিটে প্রথম মহড়ায় অংশ নেয় ২ লাখ ৫১ হাজার মানুষ।
আর চূড়ান্ত সময়, অর্থাৎ জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনে।
তার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আয়োজনে শামিল সবাইকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “বাঙালি সবসময় ইতিহাস সৃষ্টি করে।বাঙালি আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, যে সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের ভালোবাসা জানাই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, যে জাতীয় সঙ্গীত আমাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত করে, আমাদের চেতনার অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করে, সেই জাতীয় সঙ্গীত লাখো কণ্ঠে আমরা গাইব, যা বিশ্বে ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
এই আয়োজনে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার, ভিডিপি, গার্মেন্টকর্মী, নারী-শিশু, সংস্কৃতিকর্মীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
সকালে মাঠের প্রতিটি ফটক দিয়ে আগ্রহীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় গুণে গুণে। অনেকেই মাঠে আসেন গায়ে পতাকা জড়িয়ে, মাথায় পতাকার রঙের ব্যান্ডানা পরে। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্যারেড মাঠের ওই অংশটি ভাগ করা হয় ১৫টি সেক্টরে।
অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে একটি করে ক্যাপ ও ব্যাগ দেয়া হয়, যাতে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও নিয়মাবলী লেখা সংবলিত একটি কার্ড, পানি, জুস, স্যালাইনসহ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ওষুধ ছিল। প্রতিটি সেক্টরে একটি করে বড় স্ক্রিনে কিছুক্ষণ পরপরই জানিয়ে দেয়া হচ্ছিল মাঠের পরিস্থিতি আর উপস্থিতি।
৯ নম্বর সেক্টরের উত্তর দিকে প্রধানমন্ত্রীর, ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জন্য করা হয় বিশেষ মঞ্চ। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, কূটনীতিকসহ অন্যরা ছিলেন তার দক্ষিণ দিকে সামিয়ানার নিচে।
প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের উল্টো দিকে মাঠের অপর প্রান্তে আয়েঅজনের মূলমঞ্চের পশ্চাদপট সাজানো হয় মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে। ডান দিকে ছিল চার জাতীয় নেতা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছবি। আর বাম দিকে সাত বীর শ্রেষ্ঠ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
মূল পর্বের আগে সকাল ৮টা থেকে শিল্পকলা একাডেমীর পরিবেশনায় দেশবরেণ্য এবং খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে মাঠে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আগে পৌনে ১১টায় হয় দুই দফা অনুশীলন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
সকালে মাঠে প্রবেশের পর রাজধানীর নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “আমরা ক্লাসের সবাই এসেছি। আমার খুব ভাল লাগছে, আমিও সবার সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইব।”
সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র হেলাল হোসেন বলেন, “আমরা এসেছি ইতিহাসের অংশ হতে।”
অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২:৫৬ ৩৬৩ বার পঠিত