আঞ্জুম,বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃআমরা সবাই জানি সুষম খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য কতোটা প্রয়োজন। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই নিত্য নতুন খাদ্যের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে চলেছেন। কিডনি সুরক্ষায় এমন কিছু খাবারকে চিহ্নিত করা হয় যেগুলো স্বাস্থের জন্যও উপকারী।এগুলোকে কেন বিশেষ খাদ্যের তালিকায় রাখা হয়েছে এটা বুঝতে হলে আমাদের প্রথমত অক্সিডেশন বা জারণ এবং ফ্রি রেডিকেলস বা মুক্ত পরমাণু সম্পর্কে জানতে হবে। অক্সিডেশন শরীরের একটি স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া যা শক্তি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। এ ধরনের বিক্রিয়া প্রায়ই বিভিন্ন ফ্রি রেডিকেলস তৈরি করে, যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবাধ বিচরণ করতে থাকে এবং এরা প্রোটিন, ডি.এন.এ, কোষ ইত্যাদি অঙ্গাণুর ক্ষতি সাধন করে। ধারণা করা হয় এগুলো বার্ধক্য এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ইত্যাদির জন্য দায়ী।
তবে আশার কথা হলো বিশেষ খাদ্যগুলোয় প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ফ্রি রেডিকেলস দূর করতে সহায়তা করে।
এরকম দশটি বিশেষ খাদ্যকে গুরুত্ব সহকারে চিহ্নিত করা হয়েছে:
১. ক্যাপসিকাম: আপনার কিডনি সুস্থ রাখতে ক্যাপসিকাম হতে পারে প্রথম পছন্দ। সালাদ এবং যে কোন রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি৬, ফলিক এসিড এবং ফাইবার। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিনের প্রধান উপাদান, যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক।
২. পেঁয়াজ: পেঁয়াজের এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লাভনয়েড, যা রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট কিডনি জনিত উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর ভমিকা রয়েছে।
৩. রসুন: রসুনের গুণের কথা আমাদের সবারই জানা। এটি কিডনি প্রদাহ উপশম করার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। কিডনি রোগীদের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
৪. ফুলকপি: বাধাকপির মতো ফুলকপিও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। ফুলকপির একটি বিশেষগুণ হলো এটি শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।
৫. বাধাকপি: বাধাকপিকে এন্টিঅক্সিডেন্টের খনি বললেও ভুল হবে না। এরা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে আপনার কিডনিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। এতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি৬, ফলিক এসিড, প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ বাধাকপি হতে পারে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান।
৬. আপেল: বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা অনন্য।
৭. লাল আঙুর: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফ্লাভনয়েড, যা আপনার কিডনিকে রাখবে সদা তরুণ। এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৮. ডিমের সাদা অংশ: আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যে কথা চিন্তা করে ডিমকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেই। কিন্তু আপনি কি জানেন ডিমের সাদা অংশই হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রোটিন, যা আপনার কিডনির জন্য খুবই দরকারী।
৯. মাছ: মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা৩ যা কিডনি, হার্ট এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও কোলেস্টেরল কমাতে এর ভূমিকা তো রয়েছেই।
১০. অলিভ ওয়েল: গবেষণায় দেখা গেছে যেসব দেশে অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ ওয়েল বা জলপাই এর তেল ব্যবহার করা হয় সেসব দেশে কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি তুলনামূলক কম হয়। অলিভ ওয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনল যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চমৎকার কাজ করে। রন্নায় অথবা সালাদে অলিভ ওয়েল ব্যবহার বাড়তি স্বাদ যোগ করে।
আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হন অথবা যদি বিশ্বাস করেন রোগ উপশমের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম, তাহলে সঠিক খাদ্যাভাসে খুব সহজেই থাকতে পারেন রোগবালাইয়ের ঝামেলা থেকে মুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৬:১০ ১১৪২ বার পঠিত