বঙ্গ নিউস ডট কমঃ জেনে নিন দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরিঃ
প্রথমেই জেনে নিন আপনার জন্য দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি কত। কেজিতে আপনার ওজন কে ২.২ দিয়ে গুন দিলে, পাউন্ডে আপনার ওজন বের হবে।
অতিরিক্ত শুকনা দের জন্য-
১৮x পাউন্ডে আপনার ওজন= দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি
শুকনা দের জন্য-
২০x পাউন্ডে আপনার ওজন= দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি
আপনার দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি যত আপনাকে অবশ্যই তার চাইতে বেশি খাবার খেতে হবে। যদি আপনার দৈনিক ক্যলরি চাহিদা হয় ২০০০ তাহলে আপনি দৈনিক ২৫০০ ক্যালরি খাবেন। দিনে ৫০০ ক্যলরি বেশি খেলে সপ্তাহে আপনি ৩৫০০ ক্যালরি বেশি খাচ্ছেন, এটি আপনার ওজন সপ্তাহে আধা কেজি বাড়াবে।
কোন খাবারে কত ক্যালরি তা জানার জন্য- আমাদের এই এলবাম টা দেখুন- http://goo.gl/eCCCY
>বেছে নিন সুষম খাবারঃ
ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বা কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে মোটা হয় আমরা সবাই জানি। তারমানে এই নয় যে মোটা হওয়ার জন্য আপনি ইচ্ছেমত এইগুলো খেতে থাকবেন। কারণ এইসব খাবারের অনেক ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব আছে। আপনাকে খেতে হবে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পরিমিত ফ্যাট যুক্ত সুষম খাদ্য।
1. কার্বোহাইড্রেটঃ প্রথমেই আসি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার কথায়। কার্বোহাইড্রেট এ একমাত্র খাদ্য যা খাওয়ার পর চিনি তে রূপান্তরিত হয়ে আপনাকে ইন্সট্যান্ট শক্তি জোগাবে যা ওয়েট ট্রেনিং এর জন্য জরুরী (ওয়েট ট্রেনিং সমন্ধে পরে বলছি) আবার আপনার দৈনন্দিন শক্তির যোগানের জন্য ও জরুরি। ওজন বৃদ্ধির জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রচুর কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে। নিচে কতগুলো ভালো কার্বোহাইড্রেট এর উৎস উল্লেখ করা হলো-
i. শস্য (যেমন চাল, গম, ভুট্টা, যব)
ii. শস্যজাত খাবার (যেমন নুডুলস, পিঠা, মুড়ি)
iii. রুটি জাতীয় খাবার (রুটি, পরোটা, নান, বনরুটি, পাউরুটি)
iv. মিষ্টি ফল (আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি)
v. মুল জাতীয় খাবার- আলু, গাজর, মূলা
vi. বিন (শস্য বীজ যেমন সীমের বিচি)
2. প্রোটিনঃ আপনার পেশী বারানোর জন্য অবশ্যই প্রোটিন খেতে হবে। প্রোটিন এ থাকে এমাইনো এসিড। মোট ২০ ধরণের এমাইনো এসিডের মধ্যে ১২ টি প্রোটিন না খেলেও শরীর নিজ থেকেই তৈরি করে নিতে পারে। কিন্তু বাকী ৮টি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রোটিন খেতে হবে। তাছাড়া ওয়েট ট্রেনিং এ আপনার শরীরের কিছু পেশী ভেঙ্গে যায়, সেই ক্ষতি পূরণের জন্য ও আপনাকে খাবারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড গুলো পেতেই হবে। দৈনিক প্রোটিন এর পরিমান হতে হবে প্রতি কেজি ওজনের জন্য নূণ্যতম ৩-৪ গ্রাম। অর্থাৎ আপনার ওজন যদি হয় ৬০ কেজি, আপনাকে রোজ ১৮০-২৪০ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। নিচে কতগুলো ভালো প্রোটিন উৎস উল্লেখ করা হলো-
i. মুরগীর মাংস
ii. চর্বি ছাড়া গরুর মাংস
iii. ডিম ও ডিম জাত খাবার (পুডিং, ডিমের জর্দা)
iv. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (দই, ছানা, সেমাই, ফিরনী ইত্যাদি)
v. মাছ ও সি-ফুড
3. ফ্যাটঃ কিছু পরিমাণ ফ্যাট আপনার শরীরের সুস্থতা এবং ওজন বৃদ্ধি দুটোর জন্যই প্রয়োজনীয়। তাছাড়া আপনার প্রয়োজনীয় ক্যালরির পরিমাণ পূর্ণ করতেও ডায়েট এ ফ্যাট এর উপস্থিতি থাকতে হবে, কেননা ১ গ্রাম ফ্যাট এ ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিনের দ্বিগুন ক্যালরি থাকে। সুতরাং ওজন বাড়ানোর জন্য আপনাকে ফ্যাট খেতে হবে। তবে ফ্যাট দুই রকম হয়- ক্ষতিকর (সাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট) ও উপকারী (আন সাচুরেটেড ফ্যাট বা এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড EFA)। আপনার ডায়েট এ আন সাচুরেটেড ফ্যাট রাখুন। আনসাচুরেটেড ফ্যাট এ থাকে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড-এদের ওজন বৃদ্ধি ছাড়াও অনেক উপকারি দিক আছে। এদের কয়েকটি উৎস হলো-
i. মাছের তেল (যেমন কড লিভার ওয়েল)
ii. তেল যুক্ত মাছ
উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত কয়েকটি ফ্যাট যা খেতে পাড়েন-
i. অলিভ ওয়েল-
ii. পিনাট (চীনা বাদাম) এবং এ থেকে জাত খাবার (যেমন পিনাট বাটার,বাদাম পাপরি)
iii. আমন্ড বাদাম (কাঠ রঙের খোসা যুক্ত থাকে)
তবে ডিপ ফ্রাইড খাবারের চাইতে স্টির ফ্রাইড (অল্প তেলে ভাজি) বেশি স্বাস্থ্যসম্মত, তাই ফ্যাট এর চাহিদা মেটাতে স্টির ফ্রাইড খাবার গ্রহণ করুন।
>ওজন বাড়ানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই ৩ বেলার জায়গায় ৫ বেলা খেতে হবে (৬ বেলা হলে আরো ভালো)। ৩ বেলা খেলে দুটি খাবার মাঝে দীর্ঘ বিরতি থাকে। এই সময়ে শরীর ক্যাটাবলিক স্টেজ (ভাংগনের পর্যায়) এ চলে যায়এবং শরীরের পেশী ভেঙ্গে শক্তি উতপন্ন হয়। আর ৫ বেলা খেলে শরীর এনাবলিক স্টেজ (গঠনের পর্যায়) এ চলে যায়, ে সময় শরীরের ক্যালরির চাহিদা মেটানোর পরও থেকে যাওয়া ক্যালরি চর্বি তে পরিণত না হয়ে নতুন পেশী গঠনের কাজে ব্যয় হয়। ৫ বেলার মধ্যে ৩ বেলা খাবেন পূর্ণ খাবার আর দুই বেলা হালকা নাস্তা। এখনই আপনার কত ক্যালরি খেতে হবে তা জেনে নিন এবং ৫ বেলার কোন বেলায় কত ক্যালরি খাবেন তা হিসেব করে ফেলুন। প্রতি বেলায় কত ক্যালরি খেলেন মনে মনে বা খাতায় হিসেব রাখুন, কম হলে অন্য বেলায় পুশিয়ে নিন। আপনি যদি ৫ বেলা খেয়ে উপরে আলোচিত ক্যালরির পরিমাণ পূরণ করতে পাড়েন, আপনার ওজন বাড়বেই, এটা নিশ্চিত।
>ভাবছেন ৫ বেলা কি খাবেন? দুপুর আর রাতের খাবার তো সবাই জানেন। অন্যান্য বেলার খাবারের কিছু আইডিয়া দেই। সকালের জন্য ব্রেড/বিস্কিট এর সাথে জ্যাম, জেলি, মধু, মায়োনেজ, পিনাট বাটার বা চিজ খান। ডিমের ওমলেট রোজ খান। ওমলেটের সাথে চীজ, মাংসের কিমা ইত্যাদি মিশালে খেতেও ভালো লাগবে, ক্যালরির পরিমাণ ও বাড়বে। নুডুলস খেতে পাড়েন মাংস অথবা সব্জী দিয়ে। পাস্তা যদি বানাতে পারেন তাহলে নুডুলসের চাইতেই ভালো হবে। মাঝখানের নাস্তা গুলোর জন্য পাউরুটি দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে রাখুন। স্যান্ডউইচ এ দিতে পারেন ডিম ভাজি+টমেটো+চীজ অথবা মাংস+মেয়নেজ অথবা টুনা বা যে কোন দেশী মাছ+টমেটো+চীজ থবা শুধুই পিনাট বাটার বা চীজ। খেতে পারেন যে কোন বাদাম অথবা শুকনো ফল যেমন কিশমিশ, খোরমা। শুকনো খাবারের মধ্যে খেতে পারেন পিঠা , গুর-মুড়ি, নারিকেল-মুড়ি। আলু জাত যে কোন খাবার ও খেতে পারেন যেমন মিষ্টি আলু সিদ্ধ, আলু পরোটা, স্ম্যাশড পটেটো, আলুর দম ইত্যাদি। খেতে পারেন দুধ দিয়ে সিরিয়াল, কর্ণ ফ্ল্যাকস, ওটমিল বা মুড়ি । দুপুর রাতের ভারী খাবারের পরে খেয়ে নিন যে কোন ডেজার্ট যেমন পুডিং, ডিমের জর্দা, দই, ছানা, সেমাই, ফিরনী, আইসক্রীম, মিষ্টি ইত্যাদি অথবা মিষ্টি ফল যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি। উপরের বিদেশী উপাদান গুলো সবগুলোই দেশে সহজলভ্য।
>শুকনো খাবার বহন করার অভ্যাস করুন। কাজে বাইরে থাকলেও যেন আপনার ক্যালরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেন।
>যদি অরুচির কারণে বেশী খেতে না পাড়েন, খাওয়ার আগে হাটাহাটি করে নিন, এতে আপনার ক্ষুদা বাড়বে। খাওয়ার আধাঘন্টা আগ থেকে পানি খাবেন না, তাহলে বেশী খেতে পারবেন না। রুচি কেন কম তা জানার জন্য এবং বাড়ানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ও নিতে পারন।
>রোজ ই খাবারের মাঝে মাঝে পানীয় খান। কোল্ড ড্রিঙ্কস এ ওজন বাড়ে, তাই বেশি বেশি কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে যাবেন না। খাবেন যে মিষ্টি ফলের রস যেমন আম। খেতে পাড়েন বেনানা মিল্ক শেক অথবা শুধুই দুধ।
>খাবারের কথা তো গেল, কিন্তু খাবারের পাশাপাশি আপনাকে ওয়েট ট্রেনিং এক্সারসাইজ করতে হবে, নয়ত আপনার শরীর পেশী বহুল বা সুগঠিত হবেনা। এক্সারসাইজ এর জন্য পরামর্শ দিবো অন্তত কিছুদিন হলেও জিম করতে। জিমের ইন্সট্রাক্টর এর কাছ থেকে ব্যায়াম গুলো সঠিক ভাবে করার উপায় জেনে নিন। মেয়েদের জন্যও বিশেষ ধরণের ব্যায়াম আছে।
>খাবারো ব্যায়ামের পরে যেটা প্রয়োজনীয়, সেটা হলো ঘুম। দৈনিক নুণ্যতম ৬ ঘন্টা ঘুমান। ঘুমের সময় ই মাংস পেশীর বৃদ্ধি ঘটে।
>এইসব পদ্ধতি অনুসরণ করার পর রোজ ওজন মাপুন। প্রতিদিন একই সময় ওজন মাপুন কেননা খাওয়ার আগে পরে ওজনের তারতম্য হয়। এতকিছুর পরেও ওজন না বাড়লে অবশ্যই ডাক্তার দেখান। হতে পারে আপনার অন্য কোন শারীরিক সমস্যা আছে (যেমন থাইরয়েড এর সমস্যা) যার কারণে ওজন বাড়ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৭:২১ ২০১০ বার পঠিত