বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়ভাব লক্ষ্য করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে সৌদি আরব দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই নিষ্ক্রিয়তা বেশি দেখা গেছে।নবম সংসদের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় গত বছর ২১ নভেম্বর ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যান শেখ হাসিনা।
অথচ অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, সৌদি আরবে প্রধানমন্ত্রীর ওমরাহ পালনরত অবস্থার ছবি রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে নেই। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর ওমরাহ পালনরত অবস্থার ছবি চেয়ে পাঠিয়েছে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। এসব ছবি তাদের কাছেই থাকার কথা, অথচ সে-ছবির জন্য তারা ধর্না দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস একটি বিশেষ প্রচারপত্র প্রকাশ করবে। ওই প্রচারপত্রে তারা প্রধানমন্ত্রীর ওমরাহ পালনরত অবস্থার ছবি ছাপাতে চায়। কিন্তু সেসব ছবি তাদের কাছে নেই বলে দেখা দিয়েছে বিপত্তি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ওমরাহ পালনরত অবস্থার ছবি খুঁজতে গিয়ে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের রীতিমতো গলদঘর্ম হতে দেখা গেছে। অবশেষে কয়েকটি ছবির হদিস মিলেছে। অগত্যা সেগুলো সৌদি দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সৌদি আরবে প্রধানমন্ত্রীর ওমরাহ পালনরত অবস্থার ছবি সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়ে আমাদের হতবাকই করেছে। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে সৌদি আরব সফর করে এলেন প্রধানমন্ত্রী! তাই তার সেই সফরকালের যাবতীয় ছবি দূতাবাসের কাছে অবশ্যই থাকার কথা। থাকা উচিতও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তা ভেবেছিলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার এযাত্রা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সে কারণেই হয়তো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেক রাষ্ট্রদূতের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাব দেখা গেছে। সেই নিষ্ক্রিয়তা এখনো অব্যাহত আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ফের ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা এসেছে হাতেগোনা কয়েকটি। এটা বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিষ্ক্রিয়তারই বহির্প্রকাশ।
ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যেসব কর্মকর্তা রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাস কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত ছিলেন, বর্তমানে তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আশঙ্কাটা হচ্ছে, তাদের অনেককে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর আমলে দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দূতাবাস কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ করেছেন বলেও জানা গেছে।
ওই কর্মকর্তা উদাহরণ টেনে বলেন, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির জনসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম কবীরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মনিরুল কবীর বর্তমানে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রথম সচিব হিসবে নিয়োজিত রয়েছেন।
জুলফিকার রহমান দিনাজপুর জেলা বিএনপি সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টুর ছোটবোনকে বিয়ে করেছেন। সুতরাং তুরস্কের মতো দেশে জুলফিকার রহমান কর্মরত থাকলে এ সরকারের স্বার্থরক্ষা না-ও হতে পারে– এ ধারণা থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তুরস্ক বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। তারা অযাচিতভাবে তাদের সেই অবস্থান পরিষ্কারও করেছে। অভিযোগ রয়েছে, জুলফিকার রহমান এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের পক্ষে জোরালো ভূমিকা নেন নি। বরং পালন করেছেন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০৯:৩৫ ৪৪৭ বার পঠিত