তমালবঙ্গ-নিউজডেস্ক:৭ই মার্চ স্বাধীনতার জন্মদিন,সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর হাতাকাটা কালো কোট পরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণপুরুষ দৃপ্তপায়ে উঠে এলেন মঞ্চে। দাঁড়ালেন মাইকের সামনে। আকাশ-কাঁপানো স্লোগান আর মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালেন অপেক্ষমাণ জনসমুদ্রের উদ্দেশে। তারপর শুরু করলেন ভাষণ। পাকিস্তানের নিষ্পেষণ থেকে বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র ঘোষণা করলেন এই বলে- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় সেই দিন আজ। আন্দোলন থেকে গণআন্দোলন, গণআন্দোলন থেকে গণঅভ্যূত্থান, মিছিল থেকে মহামিছিল, মুক্তির সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা, সে এক দীর্ঘপথ, দীর্ঘ ইতিহাস; ‘৫২, ‘৬২, ‘৬৯, ‘৭১ তিল তিল করে সঞ্চিত হয় এই স্বপ্নের উপাদান, এই সংগ্রামের উপকরণ, বর্ণে বৈদগ্ধে ত্যাগে মহিমায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এই ইতিহাস, যে ইতিহাসের পুরোভাগে সর্বদাই অটল অবিচল এক ইতিহাস-মানব যুগপুরুষ সাহসী কান্তিময় মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁর জন্ম এই মার্চে, স্বাধীনতার এই জন্মমাসে, ১৭ই মার্চ, এ যেন ইতিহাসেরই এক পূর্বনির্ধারিত পরম্পরা, এই মাসেই জন্ম স্বাধীনতার, এই মাসেই জন্ম বঙ্গবন্ধুর, ৭ই মার্চ স্বাধীনতার জন্মদিন, ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন।এমন কবিতা, এমন চিত্রকলা, এমন ভাস্কর্য, আর কোন জাতির জীবনে আছে, আমি ভেবে পাই না। স্বাধীনতার জন্মদিনের সেই সভামঞ্চে স্বাধীনতার মহানায়ক যখন এসে দাঁড়ালেন, যখন গগনবিদারী জয়বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠল রমনা উদ্যান, যার তরঙ্গরাশি বিচ্ছুরিত হলো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলব্যাপী এই বাংলায়, জেগে উঠল রবীন্দ্রনাথের হূদয়মথিত গান ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘নজরুলের নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম’-এই অমর পঙিক্ত, জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’র চিত্রময় পঙিক্তমালা, তখন মুজিবকণ্ঠে ধ্বনিত কবিতা স্বাধীনতা, মুজিবকণ্ঠে ধ্বনিত স্বপ্ন স্বাধীনতা, মুজিবকণ্ঠে উচ্চারিত সংগীত স্বাধীনতা। স্বাধীনতার জন্মমুহূর্তের এই পুণ্যলগ্ন আমি দেখেছি, আমি দেখেছি বঙ্গবন্ধুর সেই উত্তোলিত বাহু, সেই উদ্ভাসিত তর্জনী, তাঁর মুখমণ্ডল থেকে বিচ্ছুরিত সেই জ্যোতিপুঞ্জ অপার্থিব অভূতপূর্ব অত্যাশ্চর্য। শত-সহস্র বর্ষের ইতিহাস, শত-সহস্র বর্ষের জলকল্লোল, সহস্র বর্ষের সংগ্রাম এসে মিলিত হয় এই রমনা প্রান্তরে, এই সবুজ উদ্যানে। আমি চোখ বুজে যখন দেখি তখন অভিভূত বিস্মিত, বিমোহিত হয়ে যাই। ইচ্ছা করে সেই সভামঞ্চ, সেই জলদগম্ভীর কণ্ঠ, সেই উদ্দাম দুর্জয় ঘোষণা, সেই মুহুর্মূহু জয়বাংলা ধ্বনির জয়োল্লাস, মানুষের সেই জেগে ওঠা, সেই সাহস, সেই জাগরণ, সেই অভ্যুদয়ের মুখোমুখি আবার দাঁড়াই; আবার তাঁকে দেখতে ইচ্ছা করে, স্বাধীনতার সেই কবিকে, স্বাধীনতার সেই চিত্রকরকে, স্বাধীনতার সেই ভাস্করকে প্রাণ ভরে চোখ ভরে আবার দেখি নির্নিমেষ অপলক দৃষ্টিতে।দিবসটিতে ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৭ মার্চ ২০১৪ শুক্রবার ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ গৃহীত কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সংগঠনের সব শাখাসহ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০:৩৮:৪৪ ৪০২ বার পঠিত