বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃচতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ৫২ জেলার ১১৬টি উপজেলায় এক হাজার ৩৫২ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে নামবেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের পাঁচ ধাপের এবারই সবচেয়ে বেশি উপজেলা নিয়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৫০৫ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫১১ জন ও নারী ভাইস-চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৩৩৬ জন প্রার্থী।
এসব এলাকায় ভোটকেন্দ্র থাকছে আট হাজার ৬৩টি। ভোটকক্ষ ৫১ হাজার ৩১৫টি। মোট এক কোটি ৯৬ লাখ ৬২ হাজার ৬৪৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৮৬৮ জন আর নারী ভোটার ৯৮ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ জন। নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) মোট আট হাজার ৬৩ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। সহকারি প্রিজাইডিং আফিসার প্রায় ৫১ হাজার। পোলিং অফিসার এক লাখের বেশি। এছাড়া ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক অপরাধরোধ ও শাস্তি দেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে ৪৬৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
কমিশনের সতর্ক অবস্থান
প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে সর্বত্র সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কমিশন। নির্বাচনের নিয়ম ভঙ্গকারীকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে রিটানিং কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি ও ত্রুটির অভিযোগ নিয়ে ইসি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। পরবর্তীতে নির্বাচনের চিত্র ভিন্ন হবে বলেই আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আরো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা আগে থেকে আরো সতর্ক হয়েছি।’
প্রথম পর্যায়ের অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেট একজন চেয়ারম্যানসহ দায়ীদের সাজা দিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া একজন নির্বাচন কমিশনারকে দেখা গেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার একজন এসপিকে নির্বাচনী নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে টেলিফোনে ধমকাতে। সব মিলিয়ে কমিশন এখন আগে থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও দলীয় প্রভাব সব খানেই আছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির আছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। দলগুলো তাদের ইচ্ছে মতো প্রার্থী দিয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ভোটারদের মাঝেও রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। প্রথম ধাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের পরাজয় হওয়ায় এবার তারা মাঠে মরিয়া হয়ে নেমেছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৪ জন করে ফোর্স মোতায়েন করবে। এছাড়া ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য প্রতি উপজেলায় থাকছে এক প্লাটুন করে সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহনী মাঠে নামানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে সেনাবাহিনীর প্রতি স্ট্রাইকিং ফোর্সের একজন কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (নারী-৪, পুরুষ-৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রাম পুলিশ একজন করে মোট ১৪ জন সদস্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ, পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় কেন্দ্রপ্রতি ১৫ জন ফোর্স মোতয়েন করা হবে। এতে পুলিশের সংখ্যা বেড়ে দুই জন হবে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও আদালতের নিদের্শে মহেশখালী উপজেলায় ভোটগ্রহণ পিছিয়ে ১ মার্চ নির্ধরাণ করা হয়েছে। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ১৫ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৯৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২৩ মার্চ ও ৫ম ধাপের ৭৪ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৩১ মার্চ।
বাংলাদেশ সময়: ৯:১৪:০৬ ৪৮০ বার পঠিত